Archive for the ‘Uncategorized’ Category

সরি মা

Posted: এপ্রিল 29, 2013 in Uncategorized

Normal
0

false
false
false

MicrosoftInternetExplorer4

/* Style Definitions */
table.MsoNormalTable
{mso-style-name:”Table Normal”;
mso-tstyle-rowband-size:0;
mso-tstyle-colband-size:0;
mso-style-noshow:yes;
mso-style-parent:””;
mso-padding-alt:0in 5.4pt 0in 5.4pt;
mso-para-margin:0in;
mso-para-margin-bottom:.0001pt;
mso-pagination:widow-orphan;
font-size:10.0pt;
font-family:”Times New Roman”;
mso-ansi-language:#0400;
mso-fareast-language:#0400;
mso-bidi-language:#0400;}

প্রতিদিনের মতো বাপনের আজও মেজাজ খারাপআর মেজাজ খারাপ হলেই বাপনের প্রস্রাবের চাপটাও বাড়ে তরতর করেদোতলা বারান্দার গ্রিল ধরে, কাটাকুটি করে মুত্রথলে থেকে জল ঢেলে দিলেই, ওম্.. শান্তি!

বাপনের প্রস্রাবকাণ্ডে, জনকপুর হাসপাতাল কলোনির বাসিন্দা থেকে শুরু করে রোগীদের অভিযোগ শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে সিনিয়র স্টাফ নার্স শান্তা গোমেজেরপাঁচ বছর বয়েসী এই বদ ছেলের জন্য সরি’ বলতে বলতে শান্তা আজ ভীষণ ক্লান্ততার চেয়েও সত্যি কথা, এখন ছেলের হয়ে ক্ষমা চাওয়ার আগেই সবাই আগ বাড়িয়ে বলে বসে, ‘সরি মা’

 

এই তো সেদিনই এক রোগী শান্তাকে সিস্টার না ডেকে, ডেকে বসলো, ‘সরি মা’তারপর সেই রোগী তার ইঞ্জেকশনের নল ঠিক করে দিতে অনুরোধ করেএ ডাক শোনার পর প্রচণ্ড রাগ লাগলেও পায়ের বুড়ো আঙুল দেখে তখনই সামলে নেয় সিস্টার শান্তারাগ থামানোর এ পদ্ধতি হাইস্কুলে থাকতে এক বইয়ে পড়েছিলো সেবইয়ের নাম মনে নেইকিন্তু ফর্মুলাটা ঠিক মনে আছে তারইদানিং আর আগের মতো রাগও ওঠে নাদিন দিন রাগ শব্দটি ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে খুবসেই যে পাপন, গর্ভে থাকার সময় পাপনের বাবা নিরুদ্দেশ হয়েছিল, তারপর থেকেই চলছে এই কার্যকরী বুড়ো আঙুল ফর্মুলাইদানিং এ কাজটা ঘন ঘনই করতে হচ্ছে, এই যা!

 

প্রতিদিনের রুটিন মাফিক কাজের মতো আজও একটু আগে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচে প্রস্রাব করেছে বাপনআজ তার প্রস্রাব বর্ষনের শিকার মেডিকেল কলোনীর নীচতলার বাসিন্দা কম্পাউন্ডার ফজল মিয়াঅফিসে যাওয়ার আগে গোসল সেরে বিল্ডিংয়ের সামনের বাঁশের বেড়ায় লুঙ্গীটা রোদে শুকাতে এসেছিল ফজলআর তখনই তার মাথায় রীতিমত এইম করে প্রস্রাব করে বাপনতারপরই চোখের পলকে বারান্দা থেকে হাওয়া

এরপর থেকেই, একহাত প্রস্রাব মাথায় নিয়ে কম্পাউন্ডার ফজল মিয়া বাপনদের দোতলা বারান্দার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছেকিন্তু চিৎকারেও চারতলা কলোনির কারও কোনো মাথাব্যাথা নেইএমনকি কেউই সামান্য কৌতুহলে উঁকি দিয়েও সময় নষ্ট করতে চাইছে না

 

কম্পাউডার ফজল, হিংস্র চোখে ওপরের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ওই হালার পুত বাপন, কই লুকাইছসবাইর হ কইছিআর বিচার টিচার দিমু নাএবার আর রেহায় নাই, পাইলেই তোর নুনু কাইট্টা দিমু! হালার পুতে কি পাইছে! আমার মাথা পাইলেই পেচ্ছাবের ফোয়ারা চুটায়! হে…’

‘স্যার, কি অইচে, কার ওপরে এ্যাতো চেতছেন? ওপরে তো কেও নাই?’, হাসপাতালে যাওয়ার পথে এ দৃশ্য দেখে এক রোগী জিজ্ঞেস করে

‘ওই আপনে কেডা? হু আর ইউ? নো কোশ্চেন যান রাস্তা মাপেন

 

রোগী মুখটা একটু ত্যাড়া করে বিড় বিড় করে, ‘হুদাই স্যার কইলাম! হালায় পাগলও না তো! আকাশের দিকে তাকায় আল্লারে গাইল পারছেহালায় পাগল একটা…’

 

হাছায় তো উপরে তো কেউ নাইতাতে ফজল মিয়ার রাগ আরো বাড়েএবার আগের চেয়েও দ্বিগুণ গর্জনে, ‘ওই পাপনের মা, থুক্কু! ওই ‘সরি মা’আর ইংলিশ মাড়াইলে চলবো না, পোলার বিচার করো, নাইলে আমাগো হাতে তুইল্লা দাওদেহো, কিভাবে হের ডান্ডা সোজা কইরা দেইওই ‘সরি মা’ কথা কও না কে? পোলারে লইয়া চিপাই লুকাইলে চলবো নাবাইর হোনদিলোতো একবারে নাপাক কইরা…’

 

ছেলের এসব দুষ্টুমির জন্য শান্তা গোমেজের প্রায়ই মনে হয়, বাপনকে একদিন খুব করে শাস্তি দেবে সেরিমান্ডে নেয়ার মতো নাইনটি ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে তার নরম শরীরে হাত তুলে তুলোধূনো করবে তাকেরিমান্ডে নিলে নাকি শত শত বদমাশও একদম সিদা হয়ে যায়শান্তার তাই করতে ইচ্ছা করেকিন্তু ওই পর্যন্তইশান্তার ভাবনাতেই রয়ে যায় সব

হাত তুলতে গেলেই বাপনের কালো গভীর খাদে যাওয়া চোখ দুটো থামিয়ে দেয় তার তেড়ে যাওয়া হাতকেকিছুতেই হাত তুলতে পারে না সেপ্রচণ্ড রাগে ক্ষোভে, লজ্জায়, চোখ বড় বড় করে ছেলেকে বোঝায়, বকেআবার ছেলে ঘুমিয়ে গেলে নিস্পলক চেয়ে থাকে, কাঁদে

 

এ নিয়ে কলোনির নারীকুল, শান্তাকে সমৃদ্ধ করতে নিয়মিত ফ্রি উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে

‘শুধু বকলেই চলবেনা দিদি! ছেলেকে না মারলে ‘ও’ আরও বিগড়ে যাবে! আপনাকে ভয় পাবেনা! মানুষকে মানুষ ভাববেনা! আজ অন্যের মাথায় প্রস্রাব করছেকাল আপনার মাথায় করবেএখন ‘ও’ অনেক ছোট তাই আদর করে মাফ করে দিচ্ছে সবাইমারেন ! মাইরা ঠিক করেন!’

 

শান্তা ভালভাবেই জানে এটা তার অন্ধ মাতৃস্নেহ না! কারন সেই জানে বাপনের জন্ম রহস্যতাই কেন জানি সব ঘৃণা গিয়ে পড়ে ছোট্ট পাপনের কাছেমনে হয় এ জন্মের জন্যই এ বাপনেই দায়িকি দরকার ছিলো, নার্স হয়ে সেবা বিনিময় ছাড়া রোগীর সঙ্গে নিজের সুখ দু:খের আলাপে যাওয়া

 

৬ বছর আগের কথাতখন শান্তা বরিশালের রুপতালি হাপতালে স্টাফ নার্স হিসেবে কাজ করেমনে আছে সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিলোমটোর সাইকেল এক্সিডেন্ট করে ইর্মাঞ্জেসিতে আনা হেয়েছে এক রোগীকেদুপা’য়ের অনেক জায়গা থেতলে গেছেতেমন ভয়ানক কিছু নাতবে ইর্মাঞ্জেসীর বাইরে উপচে পড়ে ভিড়পরে জানলাম রূপতালির নামকরা সন্ত্রাসী সেনাম পাপলু তালুকদারসবার মুখে তার একটাও সুনাম না শুনলেও পাপলুকে কখনই সন্ত্রাসী লাগতোনা শান্তারকেমন জানি, কিছু জানিনা! কিছু করিনি! করতে পারিনা টাইপ চেহারাচেহারার সাথে তার বদনামের প্রচুর অমিলআর কপাল, এমন ইনোসেন্ট সন্ত্রাসীর সেবার দায়িত্ব পড়লো কিনা হাসপাতালের সবচেয়ে শান্ত সিস্টার শান্তা গমেজের দায়িত্বেপ্রথম প্রথম কিছুটা অস্বস্তি হলেও পরে সন্ত্রাসী রোগীর মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে পাপলুর প্রেমে পড়ে গেল শান্তা

 

ওই পড়াটাই শেষ পড়াতারপর বাপ, মা বন্ধু সহকর্মী সকলের কথা উপেক্ষা করে ৫ মাসের মাথায় বিয়ে করে বসলো পাপলুকেবিয়ের রাতেই শান্তা চায়নি বাপন আসুককিন্তু পাপলুর আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে ঠিক ৫ দিনের মাথায় প্রশ্বাস গেল থেমেপাপলু পালিয়েছেকোথাও কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা তারকেউ বলছে ক্রসফয়ারে মারা গেছেকেউ বলছে চরে তার বউ, পোলা আছে সেখানে পালাইসেতারপর অনেকদিন থানা-পুলিশ,চর খুঁজেছে শান্তাকেউ কোন সদুত্তর দিতে পারেনিমনে হয় পারবেও নাঅপেক্ষা সেই কবে প্রতীক্ষা হয়ে গেছে তা সময় জানে

 

বাপনের জন্মের এক বছরের মাথায় জনকপুর হাসপাতালে বদলি হয়ে আসে শান্তা। প্রথমদিন থেকেই সিস্টার শান্তা এবং তার নবজাত শিশুকে নিয়ে কলোনীবাসীর নানা প্রশ্নের ফিসফিসানি। নানা কৌতুহল জিজ্ঞাসা।  ‘ নার্স তো, কোন বাদাইমা পোলারে বিয়া করসে নিশ্চিত। মধু খাইয়া মামু সইরা গেছে।‘, ‘দেখছো শরীরের ভাঁজ। একটুও নষ্ট হয়নাই। এখন ভাই লিভ টুগেদারের যুগ।‘, ‘ পোলার বাপ তো আসেনা, এমনকি কোন আত্মীয়ও আসেনা। ব্যপারটা ভাল ঠেকছেনা।

 

এসব ফিসফিসানি একসময় আওয়াজ হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেগুলোর উত্তর দেবার প্রয়োজন শান্তা কখনও মনে করেনি। আর দিতে চায়ওনা। তার নিজের সুখ দু:খ একান্তই নিজের। কারও সঙ্গে শেয়ার করবার নয়। শান্তা এতদিনে জেনে গেছে তার ভেতরে প্রচণ্ড একটা খুনি মন আছে। যার ভেতরে স্নেহ, ভালোবাসা পাওয়া বড়ই দুস্প্রাপ্য। তাইতো বাপনের প্রচণ্ড বাইরে যাওয়া, কলোনীর বাচ্চাদের সঙ্গে খেলার হাজারো আবদার সত্ত্বেও তাকে বাইরের কারো সঙ্গে মিশতে দেয়না সে। এমনকি অফিস যাবার সময় পাপনের শত কান্নার মাঝেও বাসায় প্রধান দরজায় তালা মারতে বিন্দুমাত্র হাত কাঁপেনা শান্তার।

 

জনকপুর কলোনিবাসীর এই একটি মাত্র কারণে বাপনের প্রতি মায়া উথলে পড়ে।  তারা কোনভাবেই বাপনের বন্দিদশা মানতে পারেনা। তাই সে যখন বারান্দার গ্রীলে দাঁড়িয়ে মা’কে ডাকতে থাকে তখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও কয়েকসেকেন্ড মন খারাপ হয়ে যায় কলোনিবাসীর। তবে বাপন বন্দি থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় একটি মাত্র প্রাণী। নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে সে তার নাম রেখেছে আপন। কিন্তু আপন নামের এই ছাল-বাকলহীন নেড়ি কুত্তাকে আপন ভাবা তো দূরে থাক সবাই তার কুশ্রী চেহারার জন্য কাছে ভিড়ায় না। তাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজন হলে ভাতের গরম মাড় ঢেলে রাগ ঝাড়ে নিজেদের। তারপরও আপন এ কলোনির সামনের কুল গাছের নিচে বসে থাকে। অপেক্ষায় থাকে বাপনের। আর বাপন বারান্দায় এলেই জীর্ণকায় গলাটা উপরের দিকে তাকিয়ে  আদুরে আওয়াজ করে তার অস্পর্শ মনিবকে সম্ভাষণ জানায় এই নিরীহ কুকুরটি।  যদিও পাপন আপনের সম্পর্কের মাপকাঠি স্পর্শ- অস্পর্শের্ অনেক উর্ধ্বে ওঠে গেছে সেই কবে। 

 

বেশ কয়দিন হয়ে গেল কলোনিবাসী বাপনদের বাসা থেকে আগের মতো তেমন কোন সাড়া শব্দ…

 

 

(চলবে……)

 

 

 

 

(চলবে……)

 

 

 

ভারতে লিভার ও কিডনী ক্যান্সারের ওষুধের দাম কমলো। ভারতের ক্যান্সার রোগীদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য ভারত সরকার অনুমোদন দিয়েছে দেশটির ন্যাটকো ফার্মা নামের একটি ওষুধ প্রতিষ্ঠানকে।যদিও জার্মানের বায়ার ফার্মার ওষুধের জেনেরিক সত্ত্ব ভারতের ন্যাটকো ফার্মাকে দেয়ার কারণে হতাশা প্রকাশ করেছে বায়ার কর্তৃপক্ষ।

এই সত্ত্ব পাওয়ার কারণে ভারতের অধিকাংশ গরীব ক্যান্সার রোগী ১শ ২০টি ট্যাবলেট সম্বলিত ওষধ প্যাকেটটি ৮ হাজার ৮শ রূপীতে কিনতে পারবে। যা কিনা জার্মানীর বায়ার ফার্মা থেকে কিনলে খরচ পড়তো ২ লাখ ৮০ হাজার রূপী।

ভারতে লিভার ও কিডনী ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ৮ হাজার। ভারতের ইতিহাসে কোন ওষুধ কোম্পানীকে ওষুধ তৈরী করার বাধ্যতামূলক লাইসেন্স দেয়ার ঘটনা এই প্রথম ঘটলো।

 

সূত্র: বিবিসি

মূল লেখাটা পাবেন: এই ঠিকানায়
 

ক্যান্সার নিয়ে আমরা সবাই-ই কম বেশি জানি! এটা বলতে একধরনের কিছু রোগ কে বুঝানো হয় যাকে মেডিকেলের ভাষায় আমরা বলি ম্যালিগন্যান্ট নিওপ্লাসম! ম্যলিগন্যন্সি তখনই হয়, যখন কোষ বিভাজনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে সেটা বেশি আকারে হতে থাকে।

ক্যান্সার হলে অনেক ক্ষেত্রেই তা মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায়। একারনে ক্যান্সার প্রতিরোধ একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলা যেতে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে ক্যান্সারের প্রতিরোধ সম্ভব কি?

হ্যাঁ তবে সেটা ৩০ – ৪০% ক্ষেত্রে যদি নিয়ম মেনে সঠিক ভাবে জীবন যাপন করা যায়।

কিভাবে সম্ভবঃ

১। ধূমপান থেকে বিরত থাকাঃ

ধূমপান থেকে বিরত থাকা বলতে একটিভ এবং প্যাসিভ, দুই ভাবেই বিরত থাকতে হবে। একটিভ ধুমপান বলতে, নিজে ধূমপান করা, আর প্যাসিভ ধুমপান বলতে অন্য ধূমপায়ীদের সাথে থাকার কথা বলা হয়েছে। প্রতি বছর তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি ব্যবহারর জন্য ৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। অন্য ভাবে বলতে গেলে প্রতি ৬ সেকেন্ডে মৃত্যু ঘটছে একজন মানুষের তামাক ব্যবহারের জন্য।পৃথিবীতে যত ধরনের ক্যান্সার হয়, তার এক চতুর্থাংশের কারন ই হচ্ছে এই তামাক জাতীয় দ্রব্য ধুমপান।

কি কি ক্যন্সার হয়ে থাকেঃ শুধুমাত্র ফুসফুসের ক্যান্সারই নয়, এর সাথে, মুখ, শ্বাসনালী, নাক, সাইনাস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, জরায়ু, কিডনী, লিভার এর ক্যান্সার হতে পারে!

কেন হয়ঃ ধুমপানের জন্য নানা ধরনের কারসিনোজেন (এমন মলিকিউল যা কিনা কোষের জেনেটিক ম্যাপ পরিবর্তন করে ক্যন্সার সৃষ্টি করে) থাকে। তা ছাড়া, নানা ধরনের ফ্রী র‌্যাডিকেল (যেমন সুপার অক্সাইড) এর মাধ্যমেও এমনটা হতে পারে।

সুতরাং, নিজের, নিজের পরিবারের এবং বন্ধু-বান্ধবদের জন্য নিজে ধূমপান থেকে বিরত থাকুন এবং অন্যকে বিরত থাকতে বলুন!

২। অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকাঃ

ধূমপান যেমন শরীরে নানা ধরনের ক্যান্সারের সৃষ্টি করে, ঠিক তেমন ভাবেই অ্যালকোহল শরীরের নানা স্থানে ক্যান্সারের সৃষ্টি করে থাকে।

কি কি ক্যান্সার হয়ে থাকেঃ মুখ, লিভার, ইসোফেগাস, ব্রেস্ট, ফ্যারিংস।

৩। বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশানঃ বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশানও ক্যান্সারের কারন হয়ে দাঁড়ায়। তাদের অনেক ইনফেকশান যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা হয়, তবে ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশান – হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ব্যাক্টেরিয়ার ইনফেকশানের জন্য পাকস্থলিতে ক্যান্সার হতে পারে।

ভাইরাল ইনফেকশান – হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, এপস্টিন-বার ভাইরাস, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, ক্যাপোসি সারকোমা হার্পিস ভাইরাসের জন্য ক্যান্সার হতে পারে।

কি করনীয় – যে কোনো ধরনের ইনফেকশানের জন্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে এবং রেগুলার ফলো আপ-এ থাকতে হবে!

৪। অতি বেগুনী(আল্ট্রা ভায়োলেট) রশ্মি থেকে দূরে থাকাঃ

আল্ট্রা ভায়োলেট রে সূর্যের আলোতে বিদ্যমান, এই রশ্মির কারনে তা ত্বকের কোষের নিউক্লিয়াস-এ পরিবর্তন পরিবর্তন ঘটিয়ে ত্বক-এ ক্যান্সার তথা স্কিন ক্যান্সার করে থাকে। অবশ্য এই ক্যান্সার আমাদের তুলনায় ককেশিয়ান তথা সাদা চামড়ার লোকেদের ভেতর বেশি দেখা যায়। তার পরও সূর্যের আলোর প্রখরতা বেশি হলে সরাসরি সেই আলো তে না থাকাটাই উত্তম।

৫। পরিমিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহনঃ

আমাদের খাদ্য তালিকার ভেতর অনেক খাবারই এন্টি ক্যান্সারাস উপাদান বহন করে (যেমন টমেটো), তাই পরিমিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব!

৬! নিয়িমিত ব্যয়ামঃ

নিয়মিত ব্যয়াম করার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব। ব্যাপারটা শুনতে কিছুটা অদ্ভুতও বটে, ব্যয়াম কিনা করবে ক্যান্সার প্রতিরোধ! হ্যাঁ, কেননা মিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে আমাদের ইমিউনিটির কোষ সতেজ থাকে আর এই কোষ গুলোই আমাদের শরীরে কোনো ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হলে তা ধ্বংস করে থাকে!

৭। মধ্য বয়সের পর থেকে নিয়মিত চিকিৎসকের ফলো-আপ-এ থাকাঃ

অনেক সময় ক্যান্সার সৃষ্টি হলে তা যদি দ্রুত ডায়াগনোসিস করা যায়, তাহলে সেটা চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। তাই মধ্যবয়সের পর থেকে নিয়মিত চিকিৎসকের ফলো-আপ-এ থাকা উচিত।

ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্পূর্ন ভাবে সম্ভব না হলেও, সঠিক ভাবে জীবনযাপন করে এবং সচেতন থাকার মাধ্যমে ৩০-৪০% ক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব!

মূল লেখাটা পাবেন: এই ঠিকানায়

ক্যান্সারের নাম শুনলেই আমরা ভয়ে আঁতকে উঠি। এটি কিন্তু একটি মাত্র রোগ নয় বরং বলা যায় এক প্রকার ভয়ানক জটিল ব্যাধিগোষ্ঠী। আমাদের শরীরের প্রায় যে কোনো জায়গাতেই ক্যান্সার হতে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন স্খানে বিভিন্ন প্রকৃতিতে সৃষ্ট হওয়া নানা রকম উপসর্গ সৃষ্টি করে এরা। তবে একই রকম রোগধারা এবং জীবনের মারাত্মক পরিণতির জন্য সমষ্টিগতভাবে এদেরকে ক্যান্সার বলা হয়। ক্যান্সারের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, কর্কট রোগ : কর্কট রোগ এ জন্য বলা হয় যে, কাঁকড়া যেমন কোনো বস্তুকে তার করাতের দাঁতের মতো চিমটাযুক্ত ঠ্যাৎ দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে, শত চেষ্টায়ও (ঠ্যাং ভেঙে গেলেও) তা ছাড়ানো যায় না, ক্যান্সারের প্রকৃতিও ঠিক তেমনি। আশপাশের কোষকলাকে মরণকামড় মারে, এমনকি দূরবর্তী নতুন বসতি স্খাপনাতেও হানা দেয় তার আগ্রাসী স্বভাবের কারণে।

উপযুক্ত পরিবেশে, উপযুক্ত সময়ে মাতার ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে পিতার শুক্রকীট। লক্ষণীয় যে, সাধারণভাবে একটি শুক্রকীটে এগারো জোড়া অটোজোম এবং একটি সেক্স ক্রোমোজোম, এক্স অথবা ওয়াই থাকে। মাতার একটি ডিম্বাণুতেও একইভাবে এগারো জোড়া অটোজোম এবং একটি সেক্স ক্রোমোজোম সর্বদাই ‘এক্স’ থাকে। মাতার ডিম্বাণুটি যদি পিতার ‘এক্স’ ক্রোমোজেম যুক্ত শুক্রকীট দ্বারা নিষিক্ত হয় তাহলে কন্যাসন্তান আর যদি ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোম দ্বারা নিষিক্ত হয় তাহলে পুত্রসন্তান লাভ হবে। এটি সম্পূর্ণ (আল্লাহর এখতিয়ার) (দেখুন, সূরা শুয়ারা, আয়াত-৪৯-৫০)।

এখন সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক বিষয়টি হলো মাতৃগর্ভে জরায়ুর মধ্যে নিষিক্ত ডিম্বটি এমন দ্রুতগতিতে কোষ বিভাজন শুরু করে দেয় যে, আমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। মাতার অর্ধেক পিতার অর্ধেক মিলে একটি পূর্ণ কোষ তৈরি হয় (এক্স+এক্স হলে কন্যা এবং এক্স+ওয়াই হলে পুত্র) এরপর এই কোষ থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি, চারটি থেকে আটটি এবং আটটি থেকে ষোলটি, ষোলটি থেকে বত্রিশটি, জ্যামিতিক হারে এভাবে কোষ বিভাজন দ্রুত অব্যাহত গতিতে চলতে থাকে। কোষ বিভাজনগুলো এমন সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিতভাবে এগিয়ে যায়, যাতে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সর্বাঙ্গ সুন্দর মানবশিশুটি পরিপূর্ণতা লাভ করে পৃথিবী নামক স্খানে আগমন করতে পারে। (দেখুন সূরা আল মোমেনুন, আয়াত-১২, ১৩, ১৪)।

সদ্যোজাত শিশুর নাকটি দুই ইঞ্চি কিংবা একটি কান তিন ইঞ্চি লম্বা হয়ে আসে না। কে, কোন মহাশক্তি মাতৃগর্ভে ভ্রূণের কোষ বিভাজনকে এমনভাবে সুষম সুনিয়ন্ত্রণ করে এবং একটি বিশেষ পর্যায়ে এসে কোষ বিভাজন থমকে দাঁড়ায়? শরীরের যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নির্দিষ্ট স্খানে সন্নিবেশিত হয়। একটি চোখ কপালে আর একটি মাথার পেছনে স্খাপিত হয় না। হাত-পায়ের আঙুল কোনো একটি দুই বা তিন ইঞ্চি লম্বা হয়ে যায় না। আল্লাহ হতে অবিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা বলবেন এটি নেচার বা প্রকৃতিগতভাবেই ঘটে। কিন্তু ঈমানদার বিজ্ঞানী জানেন আল্লাহই আহসানুল খালেক্বীনআল্লাহই সর্বোত্তম সৃষ্টিকারী স্রষ্টা। জন্মের ২৫ বছর পর্যন্ত নারী-পুরুষের দৈহিক আকৃতি সর্বাঙ্গ-সুন্দররূপে গড়ে তোলেন। মহাবিস্ময়ের বিষয় একটি মাত্র নিষিক্ত কোষ থেকে মানব দেহের মস্তিষ্ক, হাড্ডি, গোশত, চামড়া, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ, পরিপাক, কিডনি, অন্ত্রাদি তৈরি হয়ে যায় নিখুঁতভাবে। ব্যত্যয় যে ঘটে না তা নয়।

যে অদৃশ্য শক্তির নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেহযন্ত্র নিরলসভাবে কাজ করে যায়, ব্যত্যয় ঘটলে স্খানবিশেষে স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। সৃষ্টি হয় রোগের। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বাহ্যিক নির্ণয়যোগ্য অসুস্খতার বহু পূর্বেই সাইটোকেমিক্যাল, বায়োকেমিক্যাল অথবা কোষের মলেকিউলার লেভেলে গড়বড় শুরু হয়, যার সবটাই বিনির্ণয় করার, মাপজোক করার যন্ত্রপাতি বা জ্ঞান আজ বিজ্ঞানীদের আয়ত্তে আসেনি। ক্যান্সারের উৎপত্তির ব্যাপারেও আমরা অনেক কিছুই জানলেও আসল কথাটি জানি না। কেন ক্যান্সার হয়? কার কার হয়, কোন কোন পরিবারে হয়, কোন কোন বিশেষ এলাকাতে ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। আবার মানবদেহের কোন বিশেষ অঙ্গে তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। উল্লিখিত হয়েছে যে, আমাদের দেহ লক্ষ কোটি বিভিন্ন রকমের কোষ দিয়ে তৈরি। সুস্খ দেহে এই কোষগুলো (মস্তিষ্ক কোষ বাদে) নিয়মিত ও সুনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ ও যন্ত্রের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়রোধ করে।

ক্যান্সারের উৎপত্তি
সম্ভবত একটি অঙ্গের একটি মাত্র কোষ থেকেই ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়ে থাকে। পরে আলোচিত অথবা আমাদের অজ্ঞাত কোনো কারণে হঠাৎ করেই একটি কোষে অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন শুরু হয়ে যায় এবং বিরামহীনভাবে তা চলতে থাকে। ফলে অচিরেই সেখানে আর একটি পিণ্ড বা টিউমারের সৃষ্টি হয়। এই টিউমারটি একটি অসংহারী (ইন্নোসেন্ট বা বিনাইন) টিউমার হতে পারে শুরুতে, যা পরে সংহারী (ম্যালিগন্যান্ট) টিউমারে রূপান্তরিত হতে পারে অথবা শুরু থেকেই টিউমারটি বছরের পর বছর ধীরগতিতে বাড়ছে। স্খানীয় কোষকলার মধ্যে অনুপ্রবেশ করছে না, শরীরেও দৃষ্টিগোচর কোনো ক্ষতিসাধন করছে না, এগুলোই বিনাইন বা অক্ষতিকর। কিন্তু বিশালাকারে হলে আশপাশের অরগ্যানের ওপর চাপ দিলে কিছুটা অস্বস্তিকর বোধ হতে পারে। তবে মস্তিষ্কের ভেতর গঠিত যে কোনো টিউমারই সংহারী পদবাচ্য হবে তাদের ‘জায়গা দখলকারী’ চরিত্রের কারণে। মাথার খুলির মধ্যে মস্তিষ্ক বা তার আবরণীর যে কোনো টিউমারই সীমিত স্খানে বৃদ্ধিপ্রাপ্তিতে বাধাগ্রস্ত হয়ে চতুষ্পার্শ্বের মস্তিষ্কের কোষ নিউরনের ওপর চাপ দিয়ে তাদের কাজের ভীষণ সমস্যার সৃষ্টি করে এবং ‘হেড অফিস’ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে অকেজো করে ফেলে। সংহারী, ক্ষতিকারক বা ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলোর চরিত্র একেবারেই ভিন্নতর। এরা শুরু থেকেই সংহারী, বিনাইন, অসংহারী থেকে সংহারীতে রূপান্তরিত, যাই হোক না কেন, দ্রুতগতিতে বাড়ে, আশপাশের কোষকলায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে অনুপ্রবেশ করে। স্খানীয় শিরা-উপশিরা, লসিকাবাহী শিরার মধ্যে ক্যান্সার কোষ জোর করে ঢুকে পড়ে এবং শরীরের দূরবর্তী স্খানে গিয়েও নতুন বসতি স্খাপন করে, যাকে ‘মেটাসটেটিক টিউমার’ বলা হয়। যথাসময়ে বিস্তৃতিতে বাধা না পড়লে স্বল্পকালের মধ্যেই ক্যান্সার অবধারিতভাবেই মৃত্যু ঘটায়। তার প্রধানত কারণ এই যে, ক্যান্সার কোষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে জীবনরক্ষক অঙ্গ যেমনঅস্খিমজ্জা (বোন ম্যারো), ফুসফুস, যকৃৎ, বৃক্ক (কিডনি), মস্তিষ্ক ইত্যাদিতে নতুন বসতি স্খাপন করে। ফলে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় চলে আসে, দেহাভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয় এবং শরীরে নানা প্রকার রোগজীবাণুর সংক্রমণ ঘটায় এবং মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। ‘মেটাসটেটিক’ আয়ু কমিয়ে দেয়। তাই যথাশিগগিরই ক্যান্সার নির্ণীত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

ক্যান্সারের কারণ
ক্যান্সার কোনো সংক্রামক ব্যাধি নয়। কোনো রোগজীবাণু দ্বারা উৎপন্ন হয় না। ক্যান্সারের উৎপত্তির অনেক কারণই জানা গেছে তবে এর আসল কারণটি জানা যায়নি। ক্যান্সার উৎপাদনে কতগুলো কারণ সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত হয়েছে, এদের মধ্যে ধূমপানশ্বাসনালি ও ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টি করে, তামাক পাতা যে কোনোভাবে ব্যবহৃত হোক না কেন, জর্দা, কিমাম, খৈনী, তামাকের গুল ইত্যাদি এগুলো মুখ গহ্বরে, শ্বাসনালি, স্বর উৎপাদন যন্ত্রের (ভোকাল কর্ড) ক্যান্সার সৃষ্টি করে। স্মর্তব্য যে, হুজুর আকরাম (সা:) সতর্ক করে দিয়েছেন, নেশা উৎপাদনকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম। মদ্যপানেযকৃতের ক্যান্সার হয়। মদ এবং জুয়া সম্বে আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেছেন, ‘এই দুই বস্তুতে তোমাদের জন্য অপকার (ইসমুন) এবং উপকার দুই-ই রয়েছে। তবে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি।’

যে কোনো ধরনের মদ (অ্যালকোহল) যকৃৎ কোষের সংহার করে এবং পরিণামে লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সার হয়। বহু রাসায়নিক পদার্থ (যেমন মিথাইল কোলানথ্রিন) অন্ত্রের ক্যান্সার করে এবং এমন খাদ্য যাতে প্রচুর চর্বি রয়েছে তাও ক্ষতিকর। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, আণবিক বিস্ফোরণ, তেজস্ক্রিয়তা, রক্তের ও চামড়ার ক্যান্সার করে। সদা ঘর্ষণ, আঘাত, প্রজনন ও বিকৃত যৌন আচরণে জরায়ুর মুখের ক্যান্সার করে। বর্ণগত, জাতিগত, জীবন-যাপন পদ্ধতিগত, ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রভাব, প্যারাসাইট (পরজীবী) ও ‘ভাইরাস’ এসবই ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

আমেরিকানদের চেয়ে জাপানিদের পাকস্খলীর ক্যান্সার প্রায় ৭-৮ গুণ বেশি, আবার জাপানিদের চেয়ে আমেরিকানদের ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রকোপ দ্বিগুণের চেয়ে বেশি, আর বেলজিয়ানদের মধ্যে আমেরিকানদের চেয়েও বেশি হয় ফুসফুসের ক্যান্সার। আইসল্যান্ডের অধিবাসীদের চেয়ে নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীদের ত্বকের ক্যান্সার প্রায় ৬ গুণ বেশি। এখানে সূর্যের অতিবেগুনী (আলট্রাভায়োলেট) রশ্মিকে ক্যান্সার উৎপাদনের জন্য দায়ী করা হয়। সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে, গায়ের রঙ যত বেশি ফর্সা হবে ত্বকের ক্যান্সারের সম্ভাবনাও তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। চামড়ার মধ্যেকার ‘মেলানিন’ (সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি, যা কিনা ক্যান্সারের সহায়ক, তা থেকে) ত্বককে রক্ষাকারী।

পেশার সাথে ক্যান্সার জড়িত থাকতে পারে। যেমন অ্যাসবেস্টোস ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের ফুসফুসের ঝিল্লির ক্যান্সার পুরাল মেসোথেলিওমা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্খার (আইএলও) সুপারিশ অনুযায়ী এই ক্যান্সারে আক্রান্ত শ্রমিকরা মালিকের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণের অধিকারী হবেন। তেমনি পি.ভি.সি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিতে (পলিভাইনিল ক্লোরাইড ইন্ডাস্ট্রি) কর্মরত শ্রমিক, যারা ভাইনিল ক্লোইড পলিমেরাইজেশন চেম্বারে কাজ করেন তাদের যকৃতে অ্যানজিওসারকোমা নামক ক্যান্সার হয়। কৃষক, নাবিক, যাদেরকে রোদে পুড়ে কাজ করতে হয় তাদের মধ্যে ত্বকের ক্যান্সার বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে মুখমণ্ডলে। মহিলা যারা কাজ করে গৃহাভ্যন্তরে তারা ত্বক ক্যান্সারে কচিৎ আক্রান্ত হন, তবে কর্মজীবী মহিলা যাদের রোদে পুড়ে কাজ করতে হয় এবং সূর্যের একটিনিক রশ্মি থেকে কান এবং মুখমণ্ডলকে ঢেকে রাখেন না তাদেরও উপরোক্ত ক্যান্সারের ঝুঁকি এসে যায়। ইসলামের পর্দার বিধান মেনে চললে মহিলারা মুখমণ্ডলের ক্যান্সার থেকে বাঁচতে পারেন। হাড় কাঁপুনে শীতে যারা নিজের শরীরকে গরম রাখার জন্য কিংবা (এক প্রকার হাঁড়ি যাতে কয়লাযুক্ত আগুন থাকে, কাশ্মীরীরা ব্যবহার করেন) পেটের ওপর বেঁধে রাখেন তাদের কাংরী ক্যান্সার হয় পেটের উপরের চামড়ায়। এসবের ৯০ শতাংশই এড়িয়ে চলা সম্ভব।

বয়স
প্রায় সব বয়সেই ক্যান্সার দেখা যায়। তবে শিশু-কিশোরদের পাঁচটি ক্যান্সারের প্রকোপ খুব বেশি। (১) নিউরোব্লাস্টোমা (২) উইলমস টিউমার (৩) রেটিনো ব্লাস্টোমো (৪) একিউট লিউকিমিয়া ও (৫) র‌্যাবডোমায়ো সারমোমা। প্রথমটি অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড ব্লেইন ও নাসারন্সে, দ্বিতীয়টি কিডনিতে, তৃতীয়টি চোখে (বিড়ালাক্ষি, বিড়ালের চোখের মতো রাতে জ্বলজ্বল করে), চতুর্থটি রক্তের ক্যান্সার এবং শেষটি মাংসপিণ্ডের ক্যান্সার।

বড়দের সাধারণত পঞ্চান্ন বছর বয়সের পর (এপিথেলিয়াম কলার) ক্যান্সার পরিদৃষ্ট হয়। আমেরিকায় সমস্ত মৃত্যুর শতকরা দশভাগ ক্যান্সারজনিত, যার স্খান রোড ট্রাফিক এক্সিডেন্টের মৃত্যুর পরেই।

ক্যান্সার কি বংশজাত?
অনেকেই প্রশ্ন তোলেন আমার পিতা-মাতা উভয়েই ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাহলে আমিও কি ক্যান্সারে মারা যাব? আজ পর্যন্ত যে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে তা থেকে বোঝা যায় যে, ক্যান্সারের একটি সুনির্দিষ্ট পরিবেশগত এবং বংশগত প্রভাব রয়েছে। তবে অধিকাংশই আপনাআপনিতেই হয়। স্তন ক্যান্সার, বৃহদন্ত্র, ডিম্বকোষ, প্রস্টেট গ্রন্থি, জরায়ু এবং চামড়ার রঙ উৎপাদনকারী কোষ থেকে উৎপন্ন ক্যান্সার ‘মেলানোমা’ এরা সম্ভবত মেনডেলীয় উত্তরাধিকারের ধারা অনুসরণ করে। মোদ্দা কথা ক্যান্সার উৎপাদনে পরিবেশ এবং বংশধারা এ দুটিই আক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে দেয়।

বাংলাদেশে ক্যান্সারের প্রকোপ
আমাদের দেশে প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় দুই লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় দেড় লাখ লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে বলে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য বিবরণীতে প্রকাশ। অপরদিকে আমেরিকায় এক মিলিয়নেরও (১ মিলিয়ন=১০ লক্ষ) অধিক লোক প্রতি বছর প্রথমবারের মতো শোনেন যে তাদের কোনো না কোনো রকমের ক্যান্সার রয়েছে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালে একমাত্র ক্যান্সারেই পাঁচ লাখ ত্রিশ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করেছে, যা কিনা সমস্ত মৃত্যুর শতকরা ২৩ ভাগ এবং একমাত্র হৃৎপিণ্ড ও শিরা-উপশিরার রোগেই এই ক্যান্সারের চেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটায় সে দেশে। বাংলাদেশে এবং আমেরিকায় ক্যান্সারের প্রকোপসংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যান নিচে তুলে ধরা হলো
বাংলাদেশে ক্যান্সারের প্রকোপ (সময় জানা নেই) সূত্র : বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি কর্তৃক প্রদত্ত প্রকোপের চিত্রটি বাস্তবিকই অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়। এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে এদেশে মেডিকেল কলেজগুলোর ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র, রেডিওথেরাপি বিভাগে চিকিৎসার জন্য সত্যিকার আক্রান্ত রোগীদের শতকরা কতভাগ আসে তা জানা নেই। ক্যান্সার সারে না, তেমন কোনো চিকিৎসা নেই এবং গণঅসচেতনতার জন্যই মনে হয় ক্যান্সার রোগীদের সত্যিকার পরিসংখ্যান থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। ফলে এই রোগের কারণেযার প্রায় ৯০ শতাংশ এড়ানো যেততারা অবর্ণনীয় দু:খ-কষ্ট সয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

গণসচেতনতা বৃদ্ধি, সত্বর ও সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতির সহজলভ্যতা, চিকিৎসা ব্যয়স্বল্পতা ইত্যাদি বিষয় নি:সন্দেহে ক্যান্সার প্রকোপের হার কমিয়ে আনবে। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায় মুখ, কণ্ঠ ও গলনালি, ফুসফুস, খাদ্যনালি, স্তন, জরায়ু ও লিউকিমিয়ায় প্রায় ৭৫ শতাংশ নর-নারী আক্রান্ত। তাদের দেয়া (১) ক্যান্সারের বিপদ সংকেত (২) সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয়ের সুপারিশমালা (৩) ক্যান্সার প্রতিরোধের সুপারিশমালা প্রায় হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো

ক্যান্সারের বিপদ সংকেত
খুশখুশে কাশি কিংবা ভাঙা ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠস্বর। কাশির সাথে রক্ত, বুকে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতা, কণ্ঠনালি স্বরযন্ত্র বা ফুসফুসের ক্যান্সার কি না তা রুল আউট করুন, নি:সন্দেহ হোন।

সহজে সারছে না এমন কোনো ক্ষত।

অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ : এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, মহিলাদের বেলায় (১) সহবাসোত্তর রক্তক্ষরণ (২) যোনিপথে অস্বাভাবিক কোনো রক্তক্ষরণ

স্তনে বা শরীরের অন্য কোথাও (টিউমার) পিণ্ডের সৃষ্টি। স্তনের বোঁটার নিম্নগামিতা, রক্তমিশ্রিত রস নি:সরণ। স্তনের ঊর্ধ্ব ও বহি:চতুর্থাংশে বেশি ক্যান্সার পরিলক্ষিত হয়। সংশ্লিষ্ট স্তনের বগলে গুটলি বাঁধা খারাপ লক্ষণ।

গিলতে অসুবিধা অথবা দীর্ঘদিন যাবৎ হজমের গোলমালগলনালি বা পাকস্খলীর ক্যান্সার হতে পারে। বামদিকে ‘কলার বোন’-এর ওপর দিকে গুটলি বাঁধাপাকস্খলীর ক্যান্সার।

মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন। নিয়মিতভাবে কিছুদিন পাতলা আবার কিছুদিন শক্ত পায়খানা বা কোষ্টকাঠিন্য। মাঝে মাঝে রক্তক্ষরণ, বিশেষ করে যাদের অর্শ (পাইলস) নেই।

তিল বা আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন বড় হওয়া, চুল গজানো, রঙের পরিবর্তন, রক্তক্ষরণ, বর্ডার বা সীমানায় পরিবর্তন।

সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয়ের সুপারিশমালা
আমাদের দেশে কেন, পৃথিবীর সব দেশেরই ক্যান্সার সোসাইটির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্লোগান হচ্ছে ‘সূচনায় পড়লে ধরা, ক্যান্সার রোগ যায় যে সারা’। এই স্লোগানটি সমস্ত গণমাধ্যমে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, সিনেমা হল সর্বত্রই গণসচেতনতা বৃদ্ধির সহায়ক বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

ক্যান্সারের যে কোনো বিপদ সংকেত দুই সপ্তাহের বেশি স্খায়ী হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। সবুজ ছাতাযুক্ত স্খানে যান ‘সেবা নিন সুস্খ থাকুন।’

সম্ভব হলে প্রতি বছর স্বাস্খ্য পরীক্ষা করে নিন।

প্রতিমাসেই নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করুন।

জরায়ুর ক্যান্সার বিশেষ করে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হতে পারে (১) যদি আপনার দুর্গযুক্ত রক্তমিশ্রিত স্রাব হয় (২) যদি আপনার সহবাসোত্তর রক্তক্ষরণ হয়। এসব ক্ষেত্রে প্যাপ টেস্ট অথবা বায়োপসি টেস্ট করুন।

অন্ত্রের ক্যান্সার সন্দেহ করলে (আপনার মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন) চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ‘এনডোস্কোপি’ করে নিশ্চিত হোন।

ক্যান্সার প্রতিরোধের সুপারিশমালা
মনে রাখবেন ধূমপান নয় আসলে বিষপান। অধূমপায়ীরা ধূমপায়ীদের আশপাশে থাকলে আসলে ধূমপায়ীর মতোই সমান ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সার ও হৃদরোগের ন্যায় মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করে। কাজেই ধূমপানের বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করুন। এর জন্য আপনার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।

তামাক পাতা, তামাক পাতায় প্রস্তুত জর্দা, কিমাম, দোক্তা, খৈনী ইত্যাদি সেবন পরিহার করুন। পানপাতা শুধু চুন, খয়ের ইত্যাদি সহকারে সেবনের অভ্যাস গড়ে তুলুন। আর তা না পারলে মুখগহ্বর, জিহ্বা, গলা, ফেরিংস, লেরিংস এসবের ক্যান্সারকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত থাকুন। উল্লেখযোগ্য যে, আমাদের দেশে মুখ ও গলার ক্যান্সারের হার অত্যধিক, যার প্রায় ৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব।

সুরাপান স্বাস্খ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে শুধু যকৃতের ক্যান্সারই হয় না বরং খাদ্যনালি, কণ্ঠনালি ও ফুসফুসের ক্যান্সারেরও হার বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে যদি এর সাথে ধূমপানও যুক্ত হয়। কাজেই মদ্যপান বর্জন করুন।

অত্যধিক চর্বি বা চর্বিযুক্ত খাদ্য এবং যখন তখন খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। খাদ্য তালিকায় ছোবড়া (যেমন ডাঁটা) সবুজ পাতা-শাক-সবজি, ভিটামিন এ, সি এবং ই। জিঙ্ক (দস্তা) ও সেলেনিয়ামযুক্ত খাবার সংযোজন করুন।

নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলুন। শরীরের ওজন পরিমিত রাখুন। যথাসাধ্য নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখুন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমের ব্যবস্খা নিন (প্রত্যহ ৬-৮ ঘন্টা পর্যন্ত)।

ক্যান্সারের চিকিৎসা
ক্যান্সার চিকিৎসার সফলতা রোগের স্তর বা বিস্তৃতির ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির þেöাগান হচ্ছে যে, ‘সূচনায় পড়লে ধরা, ক্যান্সার রোগ যায় যে সারা’ এই কথাটি সর্বতোভাবে সত্য। ক্যান্সার যখন সূচনা কোষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তখন ওই স্খান বা অঙ্গ কেটে ফেললেই একশত ভাগই নিরাময় সম্ভব। আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, এ স্তরে রোগের কোনো প্রকার লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ফলে চিকিৎসকেরও শরণাপন্ন হয় না কেউ। রোগ যখন আশপাশে বা দূরবর্তী স্খানে ছড়িয়ে পড়ে অথবা লক্ষণাদি প্রকাশ পায় তখনই কেবল আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিই। একজন সাধারণ চিকিৎসক ৫-৬ বছরের একটি শিশুর সর্দি-কাশি-জ্বর এবং শরীরের কোনো কোনো জায়গায় কালো দাগকে (কালসিটে পড়া) কোনো প্রকার খারাপ অসুখ চিন্তা না করেই সাধারণ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। কালসিটে পড়া অথবা মাঢ়ি দিয়ে রক্ত পড়া, সর্দি-কাশি জ্বরের সাথে, কিংবা নাক দিয়ে রক্ত পড়া এই শিশুটির একটি মারাত্মক রোগ হয়ে থাকতে পারে, যাকে আমরা একিউট লিউকিমিয়া বলি। এখানে রক্ত পরীক্ষা ছাড়া সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। বড়দের বেলাতেও এ কথা খাটে।

সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতির প্রয়োজন দেখা দেয়। পদ্ধতিগুলো হচ্ছে (১) সার্জারি বা শল্যচিকিৎসা (২) সেঁক দেয়া, বিকিরণ চিকিৎসা বা রেডিওথেরাপি এবং (৩) কেমোথেরাপি বা ক্যান্সারবিধ্বংসী ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা।

শল্য চিকিৎসা বা সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট
প্রাথমিক অবস্খায় ক্যান্সার আক্রান্ত স্খানকে সম্পূর্ণ কেটে বাদ দিয়ে শরীরকে ক্যান্সারমুক্ত করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্খায় শল্য চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময়ের সম্ভাবনা হচ্ছে সর্বাধিক। উদাহরণস্বরূপ আমরা মহিলাদের জরায়ু মুখের ‘ক্যান্সার ইন সাইট’র কথা উল্লেখ করতে পারি। জরায়ু কেটে ফেলে দিলেই তিনি সম্পূর্ণরূপে সুস্খ হয়ে গেলেন।

সেঁক, বিকিরণ চিকিৎসা বা রেডিওথেরাপি
অনেক ক্যান্সার রোগীই শল্য কিংবা অন্যান্য চিকিৎসকের সাথে অথবা এককভাবে শুধু বিকিরণ চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিকিরণের সাহায্যে, কোনো প্রকার অস্ত্রোপচার না করেই, ক্যান্সার কোষগুলোকে শরীরের ভেতরে ধ্বংস করে ফেলা হয়।

কেমোথেরাপি বা ক্যান্সারবিধ্বংসী ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা
কোনো কোনো ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসা ও বিকিরণ চিকিৎসার সাথে অথবা এর আগে বা পরে ক্যান্সার কোষ বিধ্বংসী ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। বস্তুত রোগের স্তর এবং রোগীর অবস্খাভেদে সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট, রেডিওথেরাপি অথবা কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়।

উপসংহার
হুজুর আকরাম (সা:) ইরাশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক রোগেরই ওষুধ আছে। কাজেই ক্যান্সারও এর ব্যতিক্রম নয়। ‘মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভুবনে’যেমন মানুষের কাম্য, তেমনি আবার জন্ম নিলে মরতে হবে, অমর কে কোথা কবে? এর মধ্যেও কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ পাক বলেন, ‘তাদের জন্য যখন নির্ধারিত সময় (মৃত্যু) উপস্খিত হয় তখন এক মুহূর্তও এদিক সেদিক করা হবে না।’ ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে আশার বাণী হলো এই যে, এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। তৃতীয়াংশ ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব, আর অধিকাংশ অনিরাময়যোগ্য বেদনাদায়ক ক্যান্সারের ব্যথা উপশম করা সম্ভব।
সূত্রঃ- মনোজগত পত্রিকা

সদস্যের ছবি
matchless
নিবন্ধিত সদস্য
 
পোস্ট: 48
নিবন্ধিত হয়েছেনঃ: সোম নভেম্বর ০৫, ২০০৭ ৩:৩০ অপরাহ্ন
রক্তের গ্রুপ: B+

Re: ক্যান্সার পরিচিতি ও চিকিৎসা

লিখেছেন তনয় দত্ত 

Le hazard ne favorise que les espirits prepare:  Louis Pasteur

There are so many other things left to discover: Ralph Steinman

আমার কিছু কথা : ২০০৭ সালে  অগ্নাশয়ে ক্যান্সার শনাক্ত হবার পর র‌্যালফ মার্ভিন স্টাইনম্যান, ক্যান্সার এবং রোগ প্রতিরোধ সম্বন্ধে তার নিজের তত্ত্বকেই পরীক্ষা করে দেখেছিলেন নিজের শরীরের উপর। নিজের এই চিকিৎসাটাই তাকে বাচিয়ে রেখেছিল, ডাক্তাররা যা ধারনা করেছিলেন, তার চেয়েও বেশ অনেক দিন বেশী। কিন্তু নোবেল পুরষ্কারে খবর পৌছানোর ঠিক তিন দিন আগে  পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। প্রথা ভঙ্গ করেই মরনোত্তর নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয় এই অসাধারন বিজ্ঞানীকে। এই লেখাটি তাকে নিয়ে। র‌্যালফ স্টাইনম্যান এবং তার নোবেল পুরষ্কার এবং আবিষ্কার নিয়ে বাংলা ভাষী ব্লগে ইতিমধ্যে দুটি চমৎকার লেখা প্রকাশিত হয়েছে, দুই তরুন বিজ্ঞানীর লেখা  (এক  |  দুই ); এটি আমার জানামতে তৃতীয়। স্টাইনম্যান প্রথম বিজ্ঞানী হিসাবে তিনি ডেনড্রাইটিক কোষ এবং এর কাজের বিবরন দিয়েছিলেন। অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করবেন, এই ডেনড্রাইটিক কোষটি আসলে কি? আমাদের শরীরে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন একটি কাজের সাথে এরা জড়িত। আমাদের শরীরকে নানা রোগ জীবানুর আগ্রাসন এবং বেপরোয়া হয়ে যাওয়া নিজেদের কোষ থেকে যে প্রক্রিয়াটি আমাদের সুরক্ষা করে, সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমের খুবই  গুরুত্বপুর্ণ কিছু ভুমিকা পালন করে এই কোষটি। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধে নিয়োজিত প্রধান কোষগুলোকে  এই কোষটি  শিক্ষা দেয়, কার বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ করতে হবে। সত্তরের দশকে আবিষ্কার হওয়া এই কোষটি  এখন ক্যান্সার এর থেরাপিউটিক ভ্যাক্সিন এবং আরো অগনিত পরীক্ষামুলক ভ্যাক্সিনের গবেষনার একেবারে কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ডেনড্রাইটিক কোষের সাথে আমার পরিচয় ১৯৯৭-২০০০ সালে ভাইরোলজীর ছাত্র থাকা অবস্থায়; বিশেষ করে দ্বিতীয় পর্বে ইমিউনোলজী এবং থিসিসের এইচআইভি নিয়ে কাজ করার সময়। ২০০০ সালে ডেনড্রাইটিক কোষগুলো তখন স্পটলাইটে, বিশেষ করে হেটেরোসেক্সুয়াল যৌন সঙ্গমের সময় যোনী পথের মিউকোসা থেকে এ্ইচআইভি ভাইরাসের এই কোষগুলোকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে শরীরে ঢোকার প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার পর। ২০০৩ এ একটা সংক্রামক ব্যাধি সংক্রান্ত ট্রেনিং এর দীর্ঘ অনেকগুলো সেশন ছিল ডেনড্রাইটিক কোষের উপর, সেখানেই স্টাইনম্যানের এই কোষটিকে প্রকৃত মুল্যায়ন করার কাহিনীটা শুনি এক সুইস ডেনড্রাইটিক কোষ বিজ্ঞানীর লেকচারে। সব বিজ্ঞানীদের প্রতি আমার বাড়তি এক‍টা শ্রদ্ধাও যেমন আছে, তেমন খানিকটা ‌ঈর্ষা। কারন আমিও বিজ্ঞানী হতে চেয়েছিলাম, এইচআইভি নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম, বেশ কবার চেষ্টাও করেছিলাম নিজ দেশে, পারিনি। সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে সেই সময় এই স্বপ্ন দেখা হয়তো ঠিক হয়নি, এই হেরে যা্ওয়াটা আমার জীবনে অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। যারা হারেনি যারা এখনও গবেষনা করে যাচ্ছেন তাদের সবার প্রতি আমার ক্ষমাযোগ্য সামান্য ঈর্ষা মিশ্রিত শুভকামনা।

একজন বিজ্ঞানী এবং একটি অসাধারন কোষ:

র‌্যালফ স্টাইনম্যান রোগপ্রতিরোধবিজ্ঞান বা ইমিউনোলজীর অনেক কিছুই বদলে দিয়েছিলেন। সত্তরের দশকের শুরুতে তার আবিষ্কার করা ডেনড্রাইটিক কোষের  গুরুত্ব মেনে নিয়ে অনেক সময় নিয়েছে ইমিউনোলজীর সুবিশাল ক্ষেত্রটি। মলিকিউলার সেল বায়োলজীর সেই যুগে কেউ যে মাইক্রোস্কোপে চোখ রেখে নতুন একটি রোগপ্রতিরোধকারী কোষ আবিষ্কার করতে পারে, এটা সহজে মেনে নেয়া কঠিন ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে। গবেষনার প্রথমদিকে তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে খুবেই কঠিন সমালোচনার। মৃত্যুর মাত্র তিন দিনের মাথায় নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পথটাও খুব সহজ ছিল না। তার অসাধারন ব্যক্তিত্ব, প্রানশক্তি আর আত্মবিশ্বাস আর একাগ্রতা তাকে সহায়তা করেছে এই বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে।

১৯৪৩ সালে কানাডার কুইবেক এর শেরব্রুকে এক অভিবাসী ইহুদী পরিবারে তার জন্ম। তার পুর্বপুরুষরা এসেছিলেন পোল্যান্ড এবং মলদোভা থেকে। বাবা মা’র ইচ্ছা ছিল ছেলে ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা করবে ছেলে এবং পারিবারিক জেনারেল স্টোর ’মোজার্ট’, যেখানে কাপড় থেকে শুরু করে গৃহস্থালী সব যন্ত্রপাতিও বিক্রি হতো, তার দেখাশুনা করবে। গ্রীষ্মের ছুটিগুলোতে পারিবারিক দোকানে কাজ করার সময়ই তিনি বুঝতে পারেন, এই কাজটি তাকে দিয়ে হবেনা, অন্য কিছু হতে চান তিনি।

বিজ্ঞানের প্রতি তার তীব্র ভালোবাসা তাকে প্রথমে মন্ট্রিওলের ম্যাকগীল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরে বোষ্টনে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে নিয়ে আসে। ম্যাকগিলে আসার পরেই বায়োলজীর প্রতি আরো আকৃষ্ট হন তিনি। এরপর বোষ্টনে মেডিকেলে পড়ার সময়  ৬০ এর দশকের শেষের দিকে, তার সুযোগ হয় ইমিউনিটির শুরু সম্পর্কে কার্ট ব্লশ এর লেকচার শোনার, পিটার মেদাওয়ার এর টলারেন্স মেকানিজম ( রোগ প্রতিরোধ কারী কোষগুলোর সহনশীলতা) এবং ম্যাকফারলেন বুরনেট এর ক্লোনাল সিলেকশন সম্বন্ধে পড়াশুনা করার। ডাক্তার হবার জন্য ম্যাসাচুসেট জেনারেল হাসপাতালে রেসিডেন্সি শেষ করলেও পেশা হিসাবে চিকিৎসক হওয়াটাকে বেছে নেননি তিনি; মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষনার প্রতি তার তীব্র আগ্রহ বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধ কারী কোষগুলোর ক্ষুদ্র রহস্যময় জগত, অবশেষে তাকে নিয়ে যায় জানভিল কোন এবং জেমস হার্শ এর রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনাগারে, রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার সুচনা কিভাবে হয় সেই প্রশ্নটির উত্তর খুজতে।

সেই সময় বিজ্ঞানীরা আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার নানা মুল উপাদানগুলোর মধ্যকার পারস্পারিক সম্পর্কগুলোর রহস্য সমাধানে ব্যস্ত। বিজ্ঞানীরা ততদিনে জেনে গেছেন, আমাদের রক্তের শ্বেত রক্ত কনিকারা: যেমন বি কোষ বা বি লিম্ফোসাইট, যারা আমাদের শরীরে বাইরে থেকে আসা, আগ্রাসী বহি:শত্রুকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করে তাদের নিঃসরন করা অ্যান্টিবডি দিয়ে এবং অন্য আরেক ধরনের শ্বেত রক্তকনিকা, টি কোষ বা টি লিম্ফোসাইট, যারা সেই আগ্রাসন কারীদের সরাসরি আক্রমন করে। কিন্তু বিজ্ঞানীর জন্য যা তখন প্রধান যে প্রশ্নটি ছিল তা হলো, বি কোষ এবং টি কোষগুলোকে কে এই কাজ করার জন্য  সক্রিয় করে তুলছে।

কোন এবং হার্শ দুজনেই তখন ভাবছিলেন, রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াটা শুরু করে মাক্রোফেজ ( একটি শ্বেত রক্ত কনিকা), কিন্তু সে সময় স্টাইনম্যানের উপর প্রভাব ফেলেছিল তার ল্যাবের কয়েক ফ্লোর উপরে কাজ করা একদল বিজ্ঞানী: ক্রিষ্টিয়ান দ্য দুভে, জর্জ প্যালাডে, ফিলিপ সিয়েকিভিজ, ডেভিড সাবাতিনি এবং গুনটার ব্লোবেল, যারা আধুনিক সেল বায়োলজীর সুচনা করছিলেন তখন। স্টাইনম্যান সেই সময় কিভাবে কোষ তার ভেতরে বাইরের পরিবেশ থেকে কোন কিছুকে আত্মস্ত বা ইনজেষ্ট করে নেয় সেই পক্রিয়াটির প্রথম ব্যাখ্যা করেন, যা এন্ডোসাইটোসিস বলে পরিচিত এবং কোনের সাথে যৌথভাবে প্রস্তাব করেন এই প্রক্রিয়ায় কিভাবে কোষের পর্দা বহুব্যবহৃত বা রি সাইকেল হচ্ছে।

১৯৭০ এর দশকে কেবল তখন রোগ প্রতিরোধের সাথে সংশ্লিষ্ট কোষগুলো কিভাবে কাজ করে (সেলুলার ইমিউনিটি) ভালোভাবে গবেষনা করার জন্য কেবল কালচার প্রক্রিয়া উদ্ভাবিত হয়েছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষনগুলো তখন ইঙ্গিত করছিল, মুল বি এবং টি কোষ বা লিম্ফোসাইটগুলো (লিম্ফোসাইটও এক ধরনের শ্বেত রক্ত কনিকা) ছাড়াও আরো একধরনের কোষ এর সাথে জড়িত, প্রথমে যাদের নামকরণ করা হয় অ্যাক্সেসরি বা অতিরিক্ত কোষ, এই কোষগুলো কালচার প্লেটে কাচের সাথে আটকে থাকতো, সেকারনে স্টাইনম্যান, তার সেল বায়োলজীর সহকর্মীদের কাজ, যারা মাই্ক্রোস্কোপের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন;  দেখে অনুপ্রানিত হয়ে কাচের সাথে লাগানো কোষগুলো মাইক্রোস্কোপের নীচে ভালো করে দেখার সিদ্ধান্ত নেন, এজন্য ফেজ কনট্রাষ্ট, জীবন্ত ইমেজিং এবং ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ টেকনিক বেছে নেন।

এভাবে সত্তরের দশকে প্রথম দিকে একদিন, ম্যানহাটনের আপার ইষ্ট সাইডে রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের তার ল্যাবে কালচার প্লেটে কোষগুলোকে  (মাউসের প্লীহা থেকে সংগ্রহ করা) মাইক্রোস্কোপের নীচে রেখে দেখতে গিয়ে র‌্যালফ স্টাইনমান খুজে পেয়েছিলেন এমন একটি কোষ, যা এর আগে ঠিক সেভাবে আর কারো নজরেই পড়েনি। স্টাইনম্যানের সেদিন মনে হয়েছিল, মাইক্রোস্কোপের নীচে তিনি যা দেখছেন সেটাই সম্ভবত বিজ্ঞানীদের এতদিন ধরে খোজা সেই প্রশ্নর উত্তর: অদ্ভুত, অসংখ্য দীর্ঘ, সরু হাত বিশিষ্ট কতগুলো কোষ, যে ধরনের কোষ তিনি আগে কোনদিনও দেখেননি।

মাইক্রোস্কোপের নীচেই তিনি দেখতে পান যার কোষ ঝিল্লী থেকে অসংখ্য সরু দীর্ঘ শাখা প্রশাখা সহ হাতের দ্রুত আকার পরিবর্তনশীল প্রজেকশান; পর পর তিনটি স্বতন্ত্র পরীক্ষায় স্টাইনম্যান বুঝতে পারলেন এই ডেনড্রাইটিক কোষগুলোই আসলে সেই অজানা অ্যাকসেসরী কোষ। কোন আগ্রাসী জীবানুর প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসাবে এরাই  টি কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভাজন ও আক্রান্ত কোষ ধ্বংশ করতে টি কোষকে সক্রিয় করার কাজটি করে এবং এই কোষটির জৈব রাসায়নিকভাবে মাক্রোফেজ থেকে আলাদা। অর্থাৎ তিনি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালনকারী সেই রহস্যময় কোষটি খুজে পেলেন।


শরীরের বাইরে কালচার করা পরিণত ডেনড্রাইটিক কোষ ( গাঢ় নীল, এমএইচসি অনুগুলো রন্জিত) (ছবি সুত্র

কোষগুলো দেখে তার প্রথম যে ধারনাটা হয়েছিল, সেটাই পরবর্তী সঠিক প্রমানিত হয়েছিল। এই ডেনডাইট্রিক কোষগুলো (স্টাইনম্যান যেভাবে এদের নাম করন করেছিলেন)আমাদের শরীরে আক্রমনকারী কোন আগ্রাসী জীবানুকে শনাক্ত করতে এবং এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া সুচনা করতে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে। কোষগুলো তদের দীর্ঘ হাতের মত কোষের উপাঙ্গকে ব্যবহার করে আমাদের শরীরের মধ্যে অযাচিতভাবে ঢুকে পড়া বহিশত্রুটাকে ধরে ফেলে এবং তাদের কোষের সাইটোপ্লাজমের ভিতর নিয়ে ঢুকিয়ে নেয় বা বলা যায় গিলে ফেলে এবং তা বহন করে নিয়ে যায় অন্য রোগ প্রতিরোধকারী বা ইমিউন কোষগুলোর কাছে; মুলত: এরা এই বিশেষায়িত রোগ প্রতিরোধ কারী কোষগুলোকে চেনায় এবং শিখিয়ে দেয় কোথায় এবং কাকে তাদের আক্রমন করতে হবে। এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার, যা প্রথম বারের মত সুস্পষ্টভাবে বিজ্ঞানীদের বুঝতে সাহায্য করে রোগ প্রতিষেধক টীকা বা ভ্যাক্সিনগুলো আসলে কিভাবে কাজ করে, আর এই আবিষ্কারটি স্টাইনম্যানকে নিয়ে যায় তার পেশায় প্রথম সারিতে।


ডেনড্রাইটিক কোষ (সবুজ) এর সাথে টি কোষ ( লাল) এর ইন্টারঅ্যাকশন 

এর পরের দশকগুলোতে স্টাইনম্যান ডেনড্রাইটিক কোষ বায়োলজীর ক্ষেত্রে প্রধান গবেষক এবং উৎসাহ দাতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে থাকেন। তার অনুপ্রেরনায় বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে অনেক বিজ্ঞানীদের টেনে আনে ডেনড্রাইটিক কোষটি নিয়ে গবেষনার ক্ষেত্রে। বিভিন্ন জনের সাথে সহযোগীতা করতে খুব ভালোবাসতেন স্টাইনম্যান, ওয়েসলী ভ্যান বুরহিস এর সাথে যৌথভাবে তিনি দেখান শুধু কোষে না মানুষের রক্তেও ডেনড্রাইটিক কোষ থাকে, কায়ো ইনাবার সাথে তিনি দেখান যে যদি ডেনড্রাইটিক কোষকে টিউমারের অ্যান্টিজেন চেনানো যায় , তারা ইদুরের শরীরে টিউমারের বিরুদ্ধেও রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জেরার্ড শুলারের  সাথে তিনি দেখান যে, কোন রোগজীবানু সরাসরি এই কোষগুলোকে সক্রিয় করে তুলতে পারে রোগ প্রতিরোধে প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য।

অসম্ভব দয়ালু এই মানুষটাকে তার সহকর্মীরা খুব ভালোবাসতেন, অসুস্থ অবস্থায়ও ‍ তিনি নিশ্চিৎ করে গেছেন তার অধীনে কাজ করা ছাত্র ছাত্রী এবং ফেলোরা যেন তাদের  যোগ্য জায়গা খুজে পায় তার মৃত্যুর পর। বহু বছর ধরে তিনি জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনের সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেণ আনন্দের সাথে। তার আবিষ্কার যেন রোগীদের কাজে আসে, সেই লক্ষ্যে ডেনড্রাইটিক সেল ভ্যাক্সিন তৈরী করার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। তার নিজের ডিজাইন করা ডেনড্রাইটিক কোষ থেরাপী তিনি নিজের উপর পরীক্ষা করে ছিলেন।

এ পর্যন্ত হয়ত অনেকদিক থেকেই স্টাইনম্যানের গল্পটায় কোন বিশেষত্ব নেই: একজন মেধাবী বিজ্ঞানী, যিনি একটি গুরুত্বপুর্ণ আবিষ্কার করেন, যা অনুপ্রাণিত করে ভবিষ্যত প্রজন্মের অসংখ্য গবেষককে। কিন্তু স্টাইনম্যানের আলাদা করেছে তার অসাধারন অন্তর্দৃষ্টি ,যে অন্তর্দৃষ্টি যেমন প্রভাব ফেলেছে বিজ্ঞানে তার হাতে সৃষ্ট হওয়া নতুন একটি ক্ষেত্রে (ডেনড্রাইটিক সেল বায়োলজী), তেমনি ব্যক্তিগতভাবে তার নিজের জীবনে। যখন কেউই ডেনড্রাইটিক কোষ এর অস্তিত্ব মানতে চায়নি, তিনি তার বিশ্বাসে অটল ছিলেন, তিনি জানতেন এই কোষটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী কিছু পরিবর্তন এনে দিতে পারে। ভবিষ্যতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষনায় দৃঢ় একটি জায়গা করে নিয়েছে তার আবিষ্কার করা এই কোষটি। আর এটাই তার প্রতি তার সহকর্মীদের নজীরবিহীন ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার মুল কারন।

ডেনড্রাইটিক কোষ নিয়ে গবেষনা আরো খানিকটা এগিয়ে নেবার পর স্টাইনম্যান বুঝতে পেরেছিলেন, কান্সার থেকে এইচআইভি, বেশ কিছু ভয়ঙ্কর রোগকে শায়েস্তা করার জন্য  এই কোষগুলো হতে পারে মোক্ষম অস্ত্র। তার নিজের দীর্ঘ দিনের গবেষনাতো বটেই এবং পৃথিবী জুড়ে ডেনড্রাইটিক কোষগুলো নিয়ে তার সহযোগীদের গবেষনাও তাকে সঠিক প্রমান করার দিকে ক্রমশ এগিয়েও যাচ্ছিল;

ঠিক তখনই স্টাইনম্যানের কাহিনী অপ্রত্যাশিতভাবে মোড় নিল অন্যদিকে।

২০০৭ সালে স্টাইনম্যানের প্রানক্রিয়াস বা অগ্নাশয়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ভয়ঙ্কর আগ্রাসী যে ক্যান্সার সাধারনত: আক্রান্ত প্রতি পাচ জন রোগীর চার জনেরই জীবন কেড়ে নেয় এক বছরের মধ্যেই। জীবনের শেষ বছরগুলোতে, পেশাগত জীবনের শুরুতে যে কোষগুলো তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, সেই কোষগুলো এবং দীর্ঘ গবেষনা জীবনে গড়ে ওঠা বন্ধু সহযোগীদের শুধু তাকে সাহায্যই করেনি এই ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করতে, সব সম্ভাব্য ধারনাকে ভুল প্রমানিত করে তার জীবনকালও দীর্ঘায়িত করেছিল যথেষ্ট পরিমানে, আর এই বাড়তি সময়েই তিনি অর্জন করে নেন জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞানে তার অবদানের জন্য নোবেল পুরষ্কার।

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তার নীরব মোবাইল ফোনে নোবেল জয়ের বার্তাটি শোকাহত পরিবারের কাছে পৌছায় মৃত্যুর মাত্র তিন দিন পরে।

 প্রস্তুত মন:

ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে তেমন গুরুত্ব দিয়ে বায়োলজী পড়া হয়নি স্টাইনম্যানের, কিন্তু বায়োলজী তার মনে বিশেষ একটা জায়গা করে নিয়েছিল, বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর অতি ক্ষুদ্র অসাধারন একটি জগত তাকে ভীষন আকৃষ্ট করেছিল, যা পরবর্তীতে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পেশা থেকে নিয়ে আসে মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষনার জগতে।

জানভিল কোন এর ল্যাবে তার অফিসে টাঙ্গানো ছিল উনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত ফরাসী অনুজীববিজ্ঞানী এবং ভ্যাক্সিনোলজিষ্ট লুই পাস্তুরের বিখ্যাত একটি উক্তি: le hazard ne favorise que les espirits prepare, যা সাধারনত অনুদিত হয়, Chace favors the prepared mind, অর্থাৎ প্রস্তুত মনকেই সহায়তা করে ভাগ্য। র‌্যালফ স্টাইনম্যান এর প্রস্তুতি ছিল সন্দেহাতীত ভাবে অনেক বেশী। তার দীর্ঘ দিনের সহযোগী সারাহ স্লেশিংগার এর মতে এই প্রস্তুতিটাই তাকে তার অন্তদৃষ্টির উপর আস্থা রাখাটাকে সহজ করে দিয়েছিল। তার  এই আত্মবিশ্বাস যেমন গুরুত্বপুর্ণ একটি আবিষ্কারের পথকে সুগম করেছে,তেমন শ্রদ্ধাও আদায় করে নিয়েছে তার সহকর্মীদের।

প্রথম বারের মত ডেনড্রাইটিক কোষগুলোকে শনাক্ত করার পর,স্টাইনম্যান পরের দুই দশক ধরে, এই কোষগুলো কিভাবে কাজ করে এবং কেউ যদি চায় তবে কিভাবে গবেষনা শুরু করতে হবে তা ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে  বৈজ্ঞানিক সমাজকে এই কোষগুলোর গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করে গেছেন বিরামহীনভাবে। তার প্রতিটি সহকর্মী জানেন, স্টাইনম্যান আসলে এই কোষগুলো যে স্বতন্ত্র এক ধরনের কোষ এই ধারনাটা প্রতিষ্ঠা করতে রীতিমত যুদ্ধ করে গেছেন।

শুরুর সেই সময়ে এমনকি তার নিজের ল্যাবের অনেকেই তার দাবীর উপর ভরসা করতে পারেনি যে,স্টাইনম্যান যে কোষের কথা বলছেন এমন কোন কোষের অস্তিত্ব আসলেই আছে,আর স্টাইনম্যানের জন্য প্রধান বাধা ছিলো,এই কোষগুলোর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর মত করে কোন কালচার প্রক্রিয়া তখনও তৈরী করা সম্ভব হয়নি।

আশির দশকে এসে স্টাইনম্যান কিভাবে এই ডেনড্রাইটিক কোষগুলো দিয়ে সরাসরি রোগীদের সাহায্য করা যাবে সেই উপায় খুজতে শুরু করেন। এরপরের কয়েক দশকে ডেনড্রাইটিক কোষগুলো নিয়ে গবেষনাও বাড়তে থাকে,স্টাইনম্যানের নিজের ল্যাব তখন নজর দিয়েছে ডেনড্রাইটিক কোষ নির্ভর ভ্যাক্সিন (যক্ষা এবং এইচআইভি)এবং ক্যান্সারে চিকিৎসা তৈরীর প্রচেষ্টায়। বেশ কিছু সংক্রামক ব্যাধি যেমন একবার সংক্রমন করলে সারা জীবনের জন্য সেই রোগটি থেকে আমরা সুরক্ষিত থাকি বা আমরা ইমিউনিটি লাভ করি (কৃত্রিম ভাবে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে টিকা যে কাজটি করে),কিন্তু কিছু রোগ আছে,যেমন এইচআইভি,যক্ষা এবং ক্যান্সারগুলো আমাদের জন্য মোকাবেলা করা খুব চ্যালেন্জ্ঞিং একটা ব্যাপার,কারন এরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাকি দিতে অত্যন্ত দক্ষ। যেমন এইচআইভি র ক্ষেত্রে,ভাইরাসটি এমন কিছু কৌশল বিবর্তিত করেছে,যে এটি ডেনড্রাইটিক কোষগুলোকে হাইজ্যাক করে নেয় নিজের স্বার্থে কাজ করার জন্য;স্টাইনম্যান বলতেন,আমাদেরকে প্রকৃতির থেকে আরো চালাক হতে হবে,অর্থাৎ ডেনড্রাইটিক কোষগুলোকে আমাদের সাহায্য করতে হবে,ভাইরাস এবং টিউমার সম্বন্ধে আরো সুনির্দিষ্ট নিশানা ঠিক করে দেবার মাধ্যমে,যার বিরুদ্ধে আমাদের বিশেষায়িত রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো যেন আক্রমন করতে পারে।

১৯৯০ এর দশকে মাধব ধোদাপকন (বর্তমানে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে)এবং নীনা ভরদ্বজ এর সাথে (বর্তমানে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে)সাথে যৌথ গবেষনায় স্টাইনম্যান রক্ত থেকে ডেনড্রাইটিক কোষ পৃথক করার প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেন,এবং এই কোষগুলোকে অ্যান্টিজেন (বিভিন্ন জীবানুর,যেমন ইনফ্লুয়েন্জা এবং ‍টিটেনাস,থেকে সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট সুচক প্রোটিনের টুকরো)নিয়ে দিয়ে প্রাইম করা হয়,অর্থাৎ এই কোষগুলোকে পরিচিত করা হয়,এবং তাদের আবার শরীরে প্রবেশ করানো হয় জীবানুগুলোর বিরুদ্ধে আরো শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রোস্টেট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রথম ভ্যাক্সিন,প্রোভেন্জ তৈরী করা হয়,যা ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ থেকে ছাড়পত্র পায়,প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের টার্মিনালী বা শেষ পর্যায়ের রোগীদের মধ্যে যার ব্যবহার তাদের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে বলে ইতিমধ্যেই প্রমানিত হয়েছে-যদিও মাত্র কয়েকমাসের জন্য।


ল্যাবরেটরীতে ক্যান্সার কোষ (মাঝখানে সোনালী রং এর) কে আক্রমন করছে সক্রিয় কিলার টি কোষ ( ছবি: লেনার্ট নিলসন; ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক থেকে)


ল্যাবরেটরীতে ক্যান্সার কোষ (মাঝখানে সোনালী রং এর) কে আক্রমন করছে সক্রিয় কিলার টি কোষ ( ছবি: লেনার্ট নিলসন; ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক থেকে)

স্টাইনম্যানের কাহিনীর আরো ভিতরে প্রবেশের আগে ডেনড্রাইটিক কোষগুলো আসলে কি সেটা নিয়ে একটু আলোচনা করা দরকার।

রোগ প্রতিরোধের দীর্ঘ হাত: ডেনড্রাইটিক কোষগুলো আসলে কি?

আমাদের শরীরের যে অংশগুলো বাইরের পরিবেশের সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে, সেখানে কোষগুলোর গভীরে দীর্ঘ সরু শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট টেন্টাকলের মত হাত চারিদিকে ছড়িয়ে অপেক্ষা করে আর পাহারা দেয় ডেনড্রাইটিক কোষগুলো ( Dendritic শব্দটা এসেছে গ্রীক Dendron থেকে যার অর্থ গাছ; রালফ স্টাইনম্যান এই শাখাপ্রশাখা বিশিষ্ট দীর্ঘ সরু কোষের প্রসেস বা হাতগুলো দেখে নাম দিয়ে ছিলেন ডেনড্রাইটিক কোষ);  নাকের ভেতরে কিংবা ফুসফুসে, আমাদের অন্ত্রে, এবং বিশেষ করে চামড়ায় এরা গোপনে লুকিয়ে থাকে, যখনই কোন বহিশত্রু আমাদেরকে শরীরকে আক্রমন করার সুযোগ নেবার চেষ্টা করে, এটি সাথেই  সাথেই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সতর্ক করে দেয়, চিনিয়ে দেয় শত্রুটাকে, যার বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ করতে হবে। এই ডেনড্রাইটিক কোষগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সবচে কম বুঝতে পারা অথচ অসাধারন দক্ষ সদস্য কোষগুলোর একটি।

গত কয়েক দশকে, বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে কোষটির কিছু রহস্যের সমাধান করেছেন, বিশেষ করে কেমন করে এই ডেনড্রাইটিক কোষগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম কে শেখায়, কোন আমাদের শরীরের অংশ এবং কোনটা আমাদের জন্য বহিশত্রু এবং সম্ভাব্য ক্ষতিকারক।  সবচেয়ে কৌতুহলোদ্দীপক বিষয় যেটা বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন তা হলো, এই ডেনড্রাইটিক কোষগুলো সার্বিক রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়াটিকে সুচনা এবং নিয়ন্ত্রন করে। যেমন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মেমোরী বা স্মৃতি তৈরীতে এই কোষগুলো খুবই গুরুত্বপুর্ণ, যা আসলে সব ভ্যাক্সিন বা রোগ প্রতিরোধ টিকার কাজ করার মুল ভিত্তি;

রোগ প্রতিরোধে  এই কোষটি বিশেষ ভুমিকাটির সুযোগ নেবার চেষ্টা করছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এবং বিভিন্ন বায়োটেক কোম্পানী, বিশেষ করে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ভ্যাক্সিন বা টিকা তৈরীর জন্য, এজন্য তারা ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন রোগীদের শরীরের টিউমরটির কিছু অংশ ব্যবহার করে রোগীর নিজস্ব ডেনড্রাইটিক কোষগুলোকে সশস্ত্র করে তোলা, যেন এই  কোষগুলোই রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চিনিয়ে দিতে পারে তাদের এই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

ডেনড্রাইটক কোষগুলো আরো একটি গুরু দ্বায়িত্ব পালন করে যাকে বলা হয় ইমিউন টলারেন্স ( বা রোগ প্রতিরোধে সহনশীলতা), যার মাধ্যমে আমাদের নিজেদের রক্ষাকারী কোষগুলো শেখে কিভাবে নিজেদের শরীরের কোষগুলোকে আক্রমন না করতে হয়। এইচআইভি নিয়ে গবেষনার সময় বিজ্ঞানীরা এই কোষটির একটি অন্ধকার দিকও খুজে পান, যেমন অতি চালাক এইচঅআইভি ভাইরাসটি ডেনড্রাইটিক কোষের সাথে যুক্ত হয়ে (অনেকটা হিচ হাইক করে) নিকটবর্তী লসিকা গ্রন্থিতে পৌছে যায় যেখানে এইচআইভি তার মুল শিকার হেলপার টি কোষদের সহজেই আক্রান্ত করে। আবার কখনো কখনো কোষগুলো অসময়ে সক্রিয় হয়ে যায়, ফলে এরা অটোইমিউন কিছু  অসুখের কারন হয়ে দাড়ায়; যখন আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধের কোষগুলো আমাদের শরীরের কোষগুলো শত্রু মনে করে আক্রমন করে বসে।

দুর্লভ এবং মহামুল্যবান: 

এই কোষগুলো মুলত একধরনের শ্বেত রক্ত কনিকা। রক্তে মোট শ্বেত রক্ত কনিকাদের মাত্র ০.২ শতাংশ হচ্ছে ডেনড্রাইটিক কোষ, এবং চামড়া বা অন্যান্যে টিস্যু বা কলাতে এর পরিমান আরো কম। ১৮৬৮ সালে একজন জার্মান অ্যানাটোমিষ্ট, পল ল্যাঙ্গারহ্যানস প্রথম চামড়ায় এই কোষগুলো আবিষ্কার করেছিলেন, কিন্তু তিনি জানতেন না কোষগুলো সেখানে কি করছে? আবিষ্কারের পর প্রায় ১০০ বছর লেগেছে এদের প্রকৃত কাজটা বুঝতে; বিজ্ঞানীদের নজর এড়ানোর জন্য এদের এই খুব সামান্য পরিমান সংখ্যাই আসলে হয়তো এর প্রধান কারন। ১৯৭৩ সালে মাউসের প্লীহায় রালফ স্টাইনম্যান আবার এদের আবিষ্কার করেন এবং এরা যে রোগ প্রতিরোধের সাথে জড়িত এই বিষয়টি উদঘাটন করেন। তিনি এদের সরু লম্বা শাখাপ্রশাখা যুক্ত হাতের জন্য এদের নাম দেন ডেনড্রাইটিক কোষ। যদিও চামড়ার এপিডার্মিস অংশে যে ডেনড্রাইটিক কোষগুলো থাকে তারা এখনও ল্যাঙ্গারহ্যানস কোষ বলেই পরিচিত। এই আবিষ্কারটাই আজ প্রস্ফুটিত ডেনড্রাইটিক কোষ বায়োলজীর গবেষনার ভিত্তি রচনা করেছিল।


উপরের ছবিতে মানুষের পুর্ণ বয়স্ক ডেনড্রিইটিক কোষগুলোর সরু সরু কাটার মত অসংখ্য হাত বা কোষ প্রসেস থাকে (১ এবং ২), ইদুরদের (৩ এবং ৪); ইদুরের ডেনড্রিইটিক কোষটি সম্ভবত একটি হেলপার টি কোষের সাথে ইন্টার অ্যাক্ট করছে ছবিতে। এই ধরনের যোগাযোগের মাধ্যমে ডেনড্রিইটিক কোষগুলো রোগ প্রতিরোধ তন্ত্রের কোষগুলোকে শিক্ষিত করে তোলে এটি কিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। ল্যাবরেটরীতে পুর্ণতা প্রাপ্ত কোষগুলোকে ক্যান্সার ভ্যাক্সিনে ব্যবহার করা হয় ( ২)।সুত্র: সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান,নভেম্বর ২০০২ ; The Long Arm of Our Immune System)

এর পরের দুই দশক আসলে কেটেছে, গবেষনার জন্য কিভাবে এই কোষগুলোকে সংখ্যায় কেমন করে বাড়ানো যায়। ফ্রান্সের দার্দিলি তে শেরিং-প্লাউ এর ইমিউনোলজী রিসার্চ ল্যাবের জ্যাক বাঁশোরো ও ( বর্তমানে টেক্সাসে বেইলর ইউনিভার্সিটিতে) তার টীম ১৯৯২ সালে প্রথম সফল হন আমাদের হাড়ের মজ্জার কোষ থেকে ল্যাবরেটরির কালচার ডিশে বহু সংখ্যক ডেনড্রাইটিক কোষ তৈরী করার প্রক্রিয়াটি উদ্ভাবন করতে। প্রায় একই সাথে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়ো ইনাবার সাথে স্টাইনম্যানও সফল হন মাউসের ডেনড্রাইটিক কোষ কালচার করার প্রক্রিয়ায়। ১৯৯৪ সালে আন্তোনিও লানজাভেসচিয়ার টীম ( বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের বেলিনজোনায় ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন বায়োমেডিসিন এ) এবং জেরোল্ড শুলার ( বর্তমানে জার্মানীর ইউনিভার্সিটি অব এরলাঙ্গেন-নুরেমবার্গ এ) খুজে বের করেন কিভাবে মানুষের রক্তের শ্বেত রক্ত কনিকা মনোসাইট থেকে কিভাবে এদের তৈরী করা যায়। বিজ্ঞানীরা এখন জানেন কিভাবে মনোসাইট গুলোকে কিভাবে রাসায়নিক প্রণোদনা  দিয়ে ডেনড্রাইটিক কোষে রুপান্তরিত করে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রন করানো যায় অথবা ম্যাক্রোফেজে পরিনত করা যায় যারা আমাদের শরীরে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, মৃত কোষ এবং জীবানু পরিষ্কার করার কাজ করার জন্য।

ডেনড্রাইটিক কোষকে কালচার করার প্রক্রিয়া জানার পর এদের কাজ সম্বন্ধে গবেষনার পরিধিটা বেড়ে যায় বহুগুনে; এবং বোঝা সম্ভব হয় এই কোষগুলো কাজ করা আসল প্রক্রিয়া। বেশ কয়েক ধরনের ডেনড্রাইটিক কোষ এর সাবসেট আছে, যারা একটি  আদি বা প্রিকারসর কোষ থেকে উৎপন্ন হয়ে রক্তে আসে এবং সেখান থেকে অপরিনত ফর্মে বা অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এটি জায়গা করে নেয় আমাদের চামড়ায়, মিউকাস মেমব্রেন বা পর্দায় এবং বেশ কিছু অঙ্গে যেমন, ফুসফুস, প্লীহা। অপরিণত অবস্থায় ডেনড্রাইটিক কোষগুলির বেশ কিছু কৌশল এবং প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেয় আক্রমনকারী কোন জীবানুকে পাকড়াও করে ধরে ফেলার জন্য। যেমন, এদের আছে সাকশন কাপের মত কিছু রিসেপ্টর (কোষের গায়ে থাকা কিছু সুনির্দিষ্ট কাজে নিয়োজিত অনু) যারা জীবানুকে ধীরে ধীরে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে , বা এরা এদের চারপাশে তরল পরিবেশ থেকে আনুবীক্ষনীক পরিমান তরল গিলে ফেলে কোষের ক্ষনস্থায়ী প্রসেস দিয়ে ভিতরে টেনে নেয়; বা একটি ভ্যাকুওল ( কোষ পর্দা দিয়ে ঘেরা একটি ফর্ম) তৈরী করে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে ঘিরে ফেলে পুরোপুরি ভিতরে নেবার আগে। টেক্সাস এম ডি অ্যান্ডারসন ক্যান্সার সেন্টারের গবেষক ইয়ং জুন লিউ দেখেছেন, এই অপরিনত ডেনড্রাইটিক কোষগুলো ইন্টারফেরন আলফা বলে একটা রাসায়নিক পদার্থ নি:সরন করে, ভাইরাসকে সাথে সাথেই নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।

আমাদের শরীরের আক্রমনকারী কোন জীবানু বা আমাদের শরীরের নয় এমন কিছুকে ভিতরে ঢুকিয়ে নেবার পর এরা সেগুলোকে এনজাইম দিয়ে ছোট ছোট টুকরো  করে কেটে ফেলে; এদের মধ্যে সেই টুকরা(গুলো)কেই বেছে নেয় কোষটি, যা এই জীবানুটিকে চেনার জন্য এবং যার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত (সাধারণত কতগুলো অ্যামাইনো অ্যাসিডের অনুক্রম বা পলিপেপটাইড), এদের বলা হয় অ্যান্টিজেন। ডেনড্রাইটিক কোষ পিচ ফর্কের মত একটি অনু ব্যবহার করে এই টুকরো অংশ বা অ্যান্টিজেনটিকে তাদের কোষের বাইরে পৃষ্ঠে প্রদর্শন করার জন্য। এই পিচ ফর্কের মত অনুগুলোর নাম মেজর হিস্টোকমপ্যাটিবিলিটি কমপ্লেক্স (Major Histocompatibilty Complex বা সংক্ষেপে MHC); এরা সাধারনত: দুই ধরনের হয় ক্লাস ১ এবং ক্লাস ২; এদের দুটোর আকৃতিই ভিন্ন। এই এমএইচসি অনুর মধ্যেই তারা বহন করে অ্যান্টিজেনটিকে। ডেনড্রাইটিক কোষগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে এরা খুবই দক্ষ এমনকি সামান্যতম মাত্রার কোন অ্যান্টিজেনকে ধরে প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে।


উপরের ছবিতে ডেনড্রাইটিক কোষ কোন জীবানু সংক্রমনের বিরুদ্ধে কিভাবে কাজ করে তার একটি স্কীমাটিক ডায়াগ্রাম। (ছবিটি বড় করে দেখুন);(সুত্র: সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান,নভেম্বর ২০০২ (ইলাসট্রেশন: Terese WINSLOW in The Long Arm of Our Immune System)

অ্যান্টিজেন প্রক্রিয়াজাত করার সময়ই এরা তাদের তাদের যাত্রা শুরু করে লসিকা নালীর মধ্যে লসিকা বা লিম্ফ এর মধ্য দিয়ে, আক্রান্ত কলা বা টিস্যু থেকে এরা বের হয়ে আসে নিকটবর্তী লসিকা গ্রন্হিতে, যেটা অনেক সেনানিবাসের মত, টি এবং বি লিম্ফোসাইট উর্বর একটি জায়গা। ডেনড্রিইটিক কোষগুলো এই যাত্রা পথেই পুর্নতা লাভ করে; এই গন্তব্যে পৌছানোর পর এমএইচসি অনুর মাধ্যমে কোষগুলো একেবারে নবীন হেলপার বা সাহায্যকারী টি ‍কোষ বা লিম্ফোসাইটের (CD4+কোষ) -যারা এর আগে কোন অ্যান্টিজেন  এর মুখোমুখি হয়নি-কাছে উপস্থাপন করে। এই ডেনড্রাইটিক কোষগুলোই একমাত্র কোষ যা নবীন হেলপার টি কোষ গুলোকে অ্যান্টিজেন চেনাতে পারে: কোনটা আমাদের শরীরের অংশ না এবং ক্ষতিকর এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই অনন্য ক্ষমতার কারন এদের একটি সহ রিসেপ্টর থাকে, যে সহ রিসেপ্টরটি  এই কোষের সাথে হেলপার টি কোষের আরেকটি সম্পর্কযুক্ত রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হলে এই প্রশিক্ষনের কাজটি প্রকৃতপক্ষে ঘটে থাকে বেশ কিছু ধারাবাহিক রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়।

প্রশিক্ষন শেষ হবার পর সাহায্যকারী টি কোষগুলো (এদের সাহায্য বলার কারন এরা অন্যান্য বিশেষায়িত কোষগুলোকে সক্রিয় হবার জন্য সাহায্য করে), বি কোষকে সক্রিয় করে, অ্যান্টিবডি ( এরা এক ধরনের রাসায়নিক অনু যা একটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন এর সাথে যুক্ত হতে পারে) তৈরী করার জন্য। যে অ্যান্টিবডি গুলো অ্যান্টিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে অ্যান্টিজেন বাহী কোষ বা জীবানুকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে বা এদের চিনিয়ে দিতে সাহায্য করে অন্য কিছু কোষকে, যেমন ম্যাক্রোফেজ। ডেনড্রাইটিক কোষ এবং হেলপার টি কোষ, কিলার টি কোষকেও  (কিলার বলার কারন এরা সরাসরি আক্রমন করে কোষ পর্দায় ছিদ্র করে কোষকে হত্যা করতে পারে) সক্রিয় করে, যা এই অ্যান্টিজেনবাহী কোন জীবানু আক্রান্ত কোষকে সরাসরি আক্রমন করে, তাদের বিস্তার রোধ করতে।

ডেনড্রাইটিক কোষের প্রশিক্ষন পাওয়া কিছু কোষ, ’মেমোরী’ কোষ হিসাবে আমাদের শরীরে রয়ে যায় বহু বছর, যারা ভবিষ্যতে কোন আক্রমনের সময় দ্রুত এর প্রতিরোধে সক্রিয় হয়। রোগ প্রতিরোধে কোন কোষগুলো প্রধান ভুমিকা রাখবে তা নির্ভর করবে ডেনড্রাইটিক কোষদের কোন সাবসেট এখানে সক্রিয় হচ্ছে এবং টি কোষের সাথে যুক্ত হবার সময় এটি টি কোষকে কোন টাইপের সাইটোকাইন নি:সরণ করতে প্রণোদনা দিচ্ছে। পরজীবি এবং কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে যেমন টাইপ ২ সাইটোকাইন গুলো বি কোষগুলোকে অ্যান্টিবডি তৈরীতে বেশী সক্রিয় করে তোলে। আবার টাইপ ১ সাইকোকাইনগুলো যেমন কিলার টি কোষগুলোকে বেশী সক্রিয় করে তোলে যখন ভাইরাস এবং অন্তকোষী ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত কোষকে আক্রমন করার প্রয়োজন হয়। যদি ডেনড্রাইটিক কোষ ভুল করে ভুল সাইটোকাইন তৈরী করার প্রণোদনা দেয়, আমাদের রোগপ্রতিরোধ কারী কোষগুলোও ভুল প্রতিক্রিয়া দেখায়। প্রয়োজনীয় এবং যেমনটা দরকার সেরকম রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া জীবন মরনের ব্যপার হতে পারে। যেমন কুষ্ট বা লেপরোসী রোগ,  এর কারন যে ব্যাকটেরিয়াটি, তার দ্বারা আক্রান্ত কোন রোগী যদি টাইপ ১ প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাদের অসুখটা কম মাত্রার টিউবারকুলয়েড ধরনের কুষ্ঠ হয়, তবে যদি টাইপ ২ প্রতিক্রিয়া হয়ে তবে ভয়ঙ্কর লেপরোম্যাটাস ধরনের কুষ্ঠ রোগ হয়।

ক্যান্সার হত্যাকারী:

নবীন হেলপার টি কোষগুলো, যারা কোন অ্যান্টিজেনের মুখোমুখি হয়নি, তাদের সক্রিয় করাই ব্যবহৃত হয়  এমন প্রায় সব ভ্যাক্সিনেরই মুল কার্য্যপ্রণালী। জীবানু এবং তাদের তৈরী টক্সিন বা বিষের প্রতিরোধে ডেনড্রাইটিক কোষ যে দ্বায়িত্ব পালন করে, বিজ্ঞানীরা এখন সেই কৌশলটাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন, ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কৌশল হিসাবে। ক্যান্সার কোষগুলো মুলত: শরীরের জন্য অস্বাভাবিক; স্বাভাবিক কোষ যে অনুগুলো তৈরী করে না, ক্যান্সার কোষ সেগুলো তৈরী করতে পারে। যদি বিজ্ঞানী এমন কোন ঔষধ বা ভ্যাক্সিন তৈরী করতে পারে, যা শুধু সেই অস্বাভাবিক অনুগুলোকে নিশানা হিসাবে ব্যবহার করবে,তাহলে তারা আরো ভালোভাবে ক্যান্সার কোষকে ধ্বংশ করতে করার সুযোগ পাবে, আশে পাশের নিরীহ স্বাভাবিক কোষগুলোকে অক্ষত রেখে। আর এটা সম্ভব হলে রোগীরা কেমোথেরাপী বা রেডিয়েশনের ভয়ঙ্কর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রেহাই পাবেন।

কাজটা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র  ক্যানসার কোষেই দেখা যায় এমন অ্যান্টিজেন আসলেই দুষ্প্রাপ্র; তারপরও কিছু খুজে পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চামড়ার ক্যান্সার মেলানোমা ( মেলানোসাইটদের একটি ক্যান্সার, মেলানোসাইটগুলো আমাদের চামড়ার রঙের জন্য দায়ী,  চামড়ায় দেখা তিল গুলো আসলে মেলানোসাইটদের ছোট একধরনের নীরিহ টিউমার)। ১৯৯০ এর শেষে ব্রাসেলস এর লুডভিগ ক্যান্সার ইন্সস্টিস্টিউটের থিয়েরী বুন এবং ন্যাশনাল ক্যানসার ইন্সস্টিস্টিউটে স্টিভেন রোজেনবার্গ ও তাদের সহকর্মীরা  স্বতন্ত্রভাবে মেলানোমা নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন খুজে পান, যা এখন বেশ কয়েকটি ট্রায়ালে আছে এমন ভ্যাক্সিনের টার্গেট।

মানুষের উপর এ ধরনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সাধারনত যে ভ্যাক্সিন ব্যবহার করা হয়, তাদের তৈরী করা হয় ডেনড্রাইটিক কোষের প্রিকারসর ( অর্থাৎ যে কোষ থেকেই ডেনড্রাইটিক কোষ সৃষ্টি হয়) কোষ দিয়ে যা রোগীদের শরীর থেকে আলাদা করে সংগ্রহ করা হয়। এবং ল্যাবে টিউমরের অ্যান্টিজেন এর সাথে কালচার বা চাষ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ডেনড্রাইটিক কোষগুলো টিউমরের অ্যান্টিজেনগুলো তাদের কোষে ভিতর ঢুকিয়ে নেয়, এবং সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে তাদের কোষের পর্দার উপর এমএইচসি অনুর সাহায্যে প্রকাশ করে। গবেষকরা এই কোষগুলোকে আবার রোগীর শরীরে ফিরিয়ে দেন, যেন  টিউমরের অ্যান্টিজেন সহ এই ডেনড্রাইটিক কোষগুলো রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোকে সেই বিশেষ টিউমরের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষিত করে তোলে। এবং রোগ প্রতিরোধ কারী কোষগুলো টিউমারের বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করে।

অনেকগুলো টীমই এই অ্যাপ্রোচে এখন গবেষনা করছে, নানা ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে ; যেমন মেলানোমা, বি সেল লিম্ফোমা, প্রোষ্টেট এবং কোলন ক্যান্সার ইত্যাদি। কিছু সাফল্যর দেখাও মিলেছে, জ্যাক বাঁশোরোর টীম এবং স্টাইনম্যানের টীম ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জন অগ্রবর্তী পর্যায়ের মেলানোমা রোগীদের,যাদের মেলানোমা অ্যান্টিজেন সহ ডেনড্রাইটিক কোষ ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে দেখেছেন, টিউমারটির প্রতি এই ভ্যাক্সিনটি রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি করেছে। এছাড়াও ৯ জন রোগীর টিউমারের আকৃতি বৃদ্ধি হারও কমে গেছে, যারা এর দুটি অ্যান্টিজেনের প্রতি রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া গড়ে তুলতে পেরেছে ভ্যাক্সিনের কারনে। বিজ্ঞানী গত একদশক ধরে এই প্রক্রিয়াকে আরো কার্যকরী এবং অরো বেশী সংখ্যক রোগীর উপর গবেষনা করার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত।


উপরের ছবিতে স্তনের ক্যান্সার টিস্যুতে বিশেষ উপারে রন্জ্ঞিত করা অপ্রাপ্ত বয়স্ক ডেনড্রিইটিক কোষগুলোকে দেখা যাচ্ছে (১); বা লাল ( চামড়ায়) (২) ; কোষগুলো যখন পুর্ণতা পায়, তারা একধরনের প্রোটিন তৈরী করে, যা তাদের একটার সাথে আরেকটা যুক্ত হয়ে থাকতে সহায়তা করে (৩); তারা কাটা চামচের মত দেখতে কিছু রিসেপ্টরও তৈরী করে তাদের গায়ে, যা আক্রমন কারী কোন জীবানুর কোন টুকরা অংশ বহন করে রোগ প্রতিরোধ কারী অন্যান্য কোষগুলোকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য( ৪ নং ছবিতে সবুজ ডটগুলো)। সুত্র: সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান,নভেম্বর ২০০২ ; The Long Arm of Our Immune System)

এখন পর্যন্ত ডেনড্রাইটিক কোষ ভ্যাক্সিন পরীক্ষ‍া করা হয়েছে ক্যানসারে সর্বশেষ পর্যায়ে আক্রান্ত রোগীদের উপর, যদিও গবেষকরা বিশ্বাস করেন এই ভ্যাক্সিনগুলো আরো ভালো কাজ করবে যদি ক্যানসারের প্রথম পর্যায়ে দেয়া হয়, কারন সর্বশেষ পর্যায়ের রোগীদের মতন তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনো টিউমারটি অপসারন করার চেষ্টা করেনি এবং ব্যর্থও হয়নি।

কিন্তু কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা প্রথমে ভাবতে হবে, এ ধরনের ডেনড্রাইটিক কোষ নির্ভর ভ্যাক্সিন হয়তো বা রোগী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে তার কিছু সুস্থ কোষকেও আক্রমন করার জন্য প্ররোচিত করতে পারে অ্যান্টিজেনের সাদৃশ্যতার জন্য, যেমন, শ্বেতী বা ভিটিলিগো – চামড়া সাদা হয়ে যাওয়া জায়গাগুলো, যা স্বাভাবিক চামড়ার রন্জ্ঞক পদার্থ র্ন কোষ মেলানোসাইট ধ্বংস হবার কারনে হয়ে থাকে –মেলানোমা ক্যানসারের রোগীরা যারা অ্যান্টি মেলানোমা ক্যানসার ভ্যাক্সিন এর সবচে পুরোনো সংস্করনটি যারা পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি হয়েছিল, কিন্তু বড় কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি ( প্রায় ১০০০ রোগীকে  এই ভ্যাক্সিনটি দেয়া হয়েছিল); আবার এমনও হতে পারে ক্যান্সার নিজেই মিউটেশনের মাধ্যমে তার অ্যান্টিজেন বদলাতে পারে, ডেনড্রাইটিক কোষের প্রশিক্ষন পাওয়া রোগ প্রতিরোধী কোষের আক্রমন থেকে ’পালাতে’; এমনও হতে পারে টিউমার কোষগুলো সেই অ্যান্টিজেনটি ( যে অ্যান্টিজেন দিয়ে ভ্যাক্সিনটি ডিজাইন ক‍রা হয়েছে) তা আর তৈরীই করলো না।  এই সমস্যা অবশ্য শুধুমাত্র ডেনড্রাইটিক কোষ নির্ভর ভ্যাক্সিন এরই না, প্রচলিত ক্যান্সার চিকিৎসারও।

তাছাড়া খরচের ব্যাপারটাও আছে, শুধু একটা রোগীর টিউমার নির্ভর চিকিৎসা তৈরী করাটা ব্যয় সাপেক্ষ একটা ব্যপার। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী রোগীদের শরীর থেকে ডেনড্রাইটিক কোষ আলাদা করে তাদের ল্যাবে প্রক্রিয়াজাত করে আবার রোগীর শরীরে ইনজেকশান দেয়া এই প্রক্রিয়ার বেশী খরচ এবং সময়ের বিষয়টাকে এড়ানোর জন্য চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। একটা উপায় হলো, রোগীর শরীরে ইতিমধ্যেই থাকা ডেনড্রাইটিক কোষ এর প্রিকারসর বা আদি কোষগুলোকে সংখ্যায় বাড়ানো এবং টিউমারের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এদের ডেনড্রাইটিক কোষের রুপান্তরিত হবার প্ররোচনা দেয়া। ডেভিড এইচ লিন্চ এবং তার টীম ( বর্তমানে বেইনব্রিজ বায়োফার্মা কনসাল্টিং, ওয়াশিংটন এ) একটি বিশেষ সাইটোকাইন আবিষ্কার করেছেন, যা ঠিক এই কাজটি করে মাউসদের মধ্যে। এছাড়া জন হপকিন্স এর ড্রিউ এম পারডল তার গবেষনায় দেখিয়েছেন, ডেনড্রাইটিক কোষকে প্ররোচিত করতে যদি টিউমার কোষকিই জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে বেশী বেশী করে সাইটোকাইন নিঃসরনে বাধ্য করা হয় সেটাইসম্ভবত সবচেয়ে কার্য্যকর অ্যাপ্রোচ হবে ক্যানসারের বিরুদ্ধে ভ্যাক্সিন তৈরী করার ক্ষেত্রে।

আরেকটি অ্যাপ্রোচ, যা রকফেলারে স্টাইনম্যান ও তার সহকর্মী মিশেল সি নুসেনজোয়াইগ শুরু করেছিলেন,তা হলো অ্যান্টিজেনকে সুনির্দিষ্টভাবে নিশানা করার জন্যেএর সাথে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি জুড়ে দেয়া, যা ডেনড্রাইটিক কোষের উপরে থাকা একটি নির্দিষ্ট অনুর সাথে যুক্ত হবে।  এই অনুগুলোর এমন বৈশিষ্ট থাকতে হবে যে অ্যান্টিজেন সহ যখনই অ্যান্টিবডি যখনই এই অনুর সাথে যুক্ত হবে, এটি ডেনড্রাইটিক কোষকে প্ররোচিত করবে একে কোষের ভিতর নিয়ে যেতে, এটি ভিতরে যাবার পর অ্যান্টিজেনটি পুনরায় কোষের ভিতর প্রক্রিয়াজাত হয়ে এমএইচসি ১ এবং এমএইচসি ২ এর সাথে একে প্রদর্শন করবে। এ ধরনের বেশ কয়েকটি অনু নিয়ে বিজ্ঞানী ‍আরো জোরদার গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাউসদের মধ্যে গবেষনা বলছে যে, যদি ডেনড্রাইটিক কোষকে সক্রিয় না করেই অ্যান্টিজেনকে নিশানা বানানো হয় তাহলে টলারেন্স তৈরী হয় ( সহনশীলতা, যা প্রতিরোধ করেনা); কিন্তু  অ্যান্টিজেনকে ডেনড্রাইটিক কোষের সক্রিয়কারীদের সাথে একসাথে ব্যবহার করলে প্রতিরক্ষা উপোযোগী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়াকে থামিয়ে দেয়া:  

আরেকদল বিজ্ঞানী চেষ্টা করছেন ডেনড্রাইটিক কোষকে থামিয়ে দিতে তার ‍কাজে বাধা দিয়ে, যেখানে তাদের অতি সক্রিয়তা প্রতিরোধ করার বদলে অসুখের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সাধারনত আমদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় একটা প্রক্রিয়া ঘটে, যাকে বলে সেন্ট্রাল টলারেন্স (বা কেন্দ্রীয় সহনশীলতা); এটা ঘটে আমাদের বুকের মধ্যে থাকা একটি অঙ্গে ( যা সময়ের সাথে বিলুপ্ত হয়ে যায়) যার নাম থাইমাস (থাইমাসে পুর্ণতা পায় বলে একধরনের লিম্ফোসাইট ( শ্বেত রক্ত কনিকা) বলে টি লিম্ফোসাইট বা টি কোষ); থাইমাস, আমাদের শরীরের যে টি কোষগুলো, আমাদের শরীরেরই কোন অংশকে, আমাদের অংশ নয় বলে চেনে, এই সব ক্ষতিকর আত্মঘাতী টি কোষকে রক্তে আসার আগে শরীর থেকে সরিয়ে ফেলে। কিন্তু কিছু এধরনের  ক্ষতিকর টি কোষ অবশ্যই থাইমাসের নজরদাড়ি এড়িয়ে যায়, সুতরাং এই সমস্যার একটা বিহিত করতে আমাদের শরীরেরও একটি ব্যাক আপ ব্যবস্থা করেছে:  এই সব টি কোষকে যে প্রক্রিয়ায় আমাদের শরীর নিয়ন্ত্রন করে তার নাম পেরিফেরাল (কেন্দ্রর বাইরে) টলারেন্স বা সহনশীলতা।

কিছু রোগী, যাদের অটোইমিউন রোগ আছে ( নিজের শরীরের কোন উপাদানের উপর নিজের রোগপ্রতিরোধ কারী কোষগুলো যখন ভিন্ন ভেবে চড়াও হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করে শরীরকে), যেমন, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, টাইপ ১ ডায়াবেটিস, সিস্টেমিক লুপাস ইত্যাদি; তাদের এই পেরিফেরাল টলেরান্সের মেকানিজমে কিছু সমস্যা থাকে। ২০০১ সালে জাক বাঁশোরো ও তার সহযোগীরা দেখান যে, সিস্টেমিক লুপাস এর রোগীদের ডেনড্রাইটিক কোষ অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় এবং এই কোষগুলো বেশী মাত্রায় ইন্টারফেরোন আলফা নিঃসরণ করে। যে প্রোটিনটি আদি কোষ থেকে পুর্ন বয়স্ক ডেনড্রাইটিক কোষের রুপান্তর বাড়িয়ে দেয় রক্তে থাকা অবস্থায়।  এই পুর্ন বয়স্ক ডেনড্রাইটিক কোষ তখন রক্তে থাকা রোগীর ডিএনএ কে কোষের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয় ( লুপাসের রোগীদের রক্তে এমনিতেই স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক বেশী ডিএনএ অনু রক্তে থাকে) এবং এটিকে অ্যান্টিজেন হিসাবে প্রদর্শন করে ডেনড্রাইটিক কোষগুলো রোগীর নিজের ডিএনএর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরী করতে প্ররোচনা দেয়, এই অ্যান্টিবডি শরীরের নানা অংশে প্রতিক্রিয়া করে জটিল রোগের সৃষ্টি করে। এখানে ডেনড্রাইটিক কোষ এর অতিসক্রিয়তা এবং ইন্টারফেরোন আলফা নিঃসরণ বন্ধ করলে এই ঘাতক রোগের একটি চিকিৎসা আবিষ্কার করা সম্ভব। একই ভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের রোগীদের ক্ষেত্রে এই কোষগুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলে, নতুন অঙ্গ বাতিল করার শারীরিক ইমিউন প্রক্রিয়াকেও নিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে।

এমনকি  এইডস এর নতুন চিকিৎসার জন্য ডেনড্রাইটিক কোষ সম্বন্ধে আরো জানা প্রয়োজন। ২০০০ সালে নেদারল্যান্ডস এর নিমেজেন এর সেইন্ট রাডবুড মেডিকেল সেন্টারে কার্ল জি ফিগডর এবং ইভেট ভ্যান কুইক, একটি বিশেষ গ্রুপ ডেনড্রাইটিক কোষ খুজে পান যারা DC-SIGN (Dendritic Cell-Specific Intercellular adhesion molecule-3-Grabbing Non-integrin) বলে একটি অনু তৈরী করে, যে অনুটা এইচ আই ভি ভাইরাসের বাইরের পর্দার একটি অনুর সাথে সংযুক্ত হতে পারে। এই কোষগুলো মিউকাস মেমব্রেনে পাহারা দেবার সময় ভাইরাসটি এই অনুর সাথে ডেনড্রাইটিক কোষের অজান্তেই নিজেকে যুক্ত করে ফেলে, এবং ‌এরা যখন লসিকা গ্রন্থিতে আসে এইচ আই ভি অসংখ্য টি কোষ পায় আক্রমন করার জন্য। যে ঔষধটি এই DC-SIGN এর সাথে HIV ভাইরাসের এই যুক্ত হবার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারে, সেটি AIDS হবার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। এছাড়া অনেক সংক্রামক ব্যাধির জীবানু যেমন ম্যালারিয়া, মিজলস (হাম) এবং সাইটোমেগালোভাইরাস – এরাও ডেনড্রাইটিক কোষকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। যেমন ম্যালেরিয়া পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত লোহিত রক্ত কনিকা গুলো ডেনড্রাইটিক কোষগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে এদের পুর্নতা পেতে দেয়না, ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এরা ম্যালেরিয়ার জীবানুর বিরুদ্ধে সতর্ক করতে বাধার মুখে পড়ে। বেশ কয়েকটি গ্রুপের গবেষকরা চেষ্টা করছেন ডেনড্রাইটিক কোষগুলোকে এধরনের হাইজ্যাকিং থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায় তার জন্য।

এই কোষটিকে নিয়ন্ত্রন কারী অনুগুলো সম্বন্ধে আমরা যত জানবো ততই আমরা চিকিৎসার জন্য এই কোষটিকে ব্যবহার করা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবো। ক্রমশ বাড়তে থাকা গবেষকদের সংখ্যা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কর্পোরেশনদের এই কোষ নিয়ে কাজ করার জন্য আগ্রহ বৃদ্ধি আভাস দিচ্ছে, খুব শিঘ্রই আমরা এই কোষগুলোর সর্ব্বোচচ ক্ষমতাগুলো  আমরা আমাদের আক্রান্ত করা নানা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে কাজে লাগাতে সক্ষম হবো।

এবার ফিরে যাই মুল লেখায়।

 শেষ বড় এক্সপেরিমেন্ট, একজন বিজ্ঞানী যখন রোগী:

২০০৭ এর প্রথম দিকে কলোরাডোতে একটা বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যোগ দেবার সময় স্টাইনম্যান হঠাৎ  করে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েনএবং মার্চের শেষ সপ্তাহে তার অগ্নাশয়ে টিউমারটি ধরা পড়ে সিটি স্ক্যানে। ততদিনে এটি ছড়িয়ে পড়েছে কাছাকাছি লসিকা গ্রন্হিগুলোতে। স্টাইনম্যান জানতেন তার বেচে থাকার সম্ভাবনা কত ক্ষীন। অগ্নাশয়ের এই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৮০ শতাংশই মারা যায় প্রথম বছরেই। মেয়ে আলেক্সিস এর মনে আছে,স্টাইনম্যান যখন তার অসুখ নিয়ে পরিবারে সবার সাথে কথা বলেছিলেন,তার আত্মবিশ্বাস ছিল স্পষ্ট, কারন অসুখটা যদিও ভয়াবহ,তবে পৃথিবীর যে কোন ক্যান্সারের রোগীর তুলনায় তার অবস্থান কিন্তু ছিল ভিন্ন:পৃথিবীর সেরা ইমিউনোলজিষ্ট আর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা তার সহকর্মী; কিন্তু তারচেয়েও গুরুত্বপুর্ন,স্টাইনম্যান জানতেন,তার এই সহকর্মী গবেষকরা ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য প্রতিশ্রুতিশীল বেশ কিছু চিকিৎসা নিয়ে গবেষনা করছেন,যার অনেকগুলোই তার পথ দেখানো ডেনড্রাইটিক কোষ নির্ভর।

সহকর্মীদের মধ্যে প্রথম খবরটি পান সারাহ স্লেশিঙ্গার;হাই স্কুলে পড়ার সময় সারাহ, জানভিল কোন এর ল্যাবে কাজ করতে এসেছিলেন একটা সামার প্রোগ্রামে,সেখান থেকেই তার পরিচয় স্টাইনম্যানের সাথে। একই বেন্চে বসে স্টাইনম্যান তাকেও ডেনড্রাইটিক কোষ খোজার নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। স্লেশিঙ্গার এবং আরেক ঘনিষ্ট সহকর্মী মিশেল নুসেনজোয়াইগ সাথে নিয়ে  স্টাইনম্যান ধীরে ধীরে তার বিশাল নেটওয়ার্কের সবাইকে খবরটা ফোন করে জানান।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন,তার আরো একটি এবং হয়তো বা তার জীবনে শেষ পরীক্ষাটি এবার তাকে করতে হবে।স্টাইনম্যান দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করতেন,কোন ক্যান্সারকে নিশ্চিতভাবে চিকিৎসা করতে হলে রোগীর নিজের ডেনড্রাইটিক কোষগুলো এই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি তৈরী করতে হবে। তার এই ধারনা সঠিক প্রমান করার জন্য যে পরীক্ষার কথা ভাবছিলেন স্টাইনম্যান,তার জন্য তাদের হাতে সময়ও ছিল না খুব একটা বেশী ।

স্টাইনম্যানের এর পরের ফোনটি ছিল তার দীর্ঘদিনের সহযোগী এবং বর্তমানে ডালাসে বেইলর  ইন্সস্টিটিউট ফর ইমিউনলজীর পরিচালক জাক বাঁশোরো কে। বাশোরো যোগাযোগ করেন বেইলর এর গবেষক এবং স্টাইনম্যানের ল্যাবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা আনা ক্যারোলীনা পালুকার সাথে; যিনি এই রকম একটি পরীক্ষা মুলক ভ্যাক্সিন নিয়ে তখন গবেষনা করছিলেন। পালুকার মনে হয়েছিল,তার ভ্যাক্সিনটি হয়তো স্টাইনম্যানকে সাহায্য করতে পারে,কিন্তু তার ব্যক্তিগত চ্যালেন্জ্ঞটি ছিল,বন্ধু, রোগী এবং বিজ্ঞানী স্টাইনম্যানকে পৃথক করা।

সহকর্মী  স্লেশিঙ্গার যোগাযোগ করলেন স্টাইনম্যানের আরেকজন দীর্ঘদিনের সহযোগী এবং আরএনএ বেসড ড্রাগ কোম্পানী আরগোস থেরাপিউটিকস(এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্টাইনম্যান)এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা চার্লস নিকোলেটকে;নিকোলেট এর টীম ইতিমধ্যে একটি ডেনড্রাইটিক কোষ ভ্যাক্সিন তৈরী করেছিল,যা একটি ট্রায়ালে ছিল (ফেজ ২)কিডনীর কান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য।আরগোস এই টীমটি প্রথমে রোগীর শরীরে ডেনড্রাইটিক কোষগুলো সংগ্রহে নিয়ে তাদেরকে টিউমর থেকে নেয়া জেনেটিক  উপাদানের কিছু নির্দিষ্ট জীন যা টিউমারটির এন্টিজেনিসিটি নির্ধারন করে,সেটি দ্বারা ট্রান্সফেকশন (জীনটি ডেনড্রাইটিক কোষের ভিতরে ঢুকে পরে)করানো হয় ডেনড্রাইটিক কোষের ভিতরে,এবং প্রয়োজনীয় অ্যান্টিজেন প্রোটিনটি কোষের ভিতর তৈরী হলে ডেনড্রাইটিক কোষগুলো তা পক্রিয়াজাত করে,টি কোষের কাছে উপস্থাপন করে,ফলে রোগীর শরীরে এটা টিউমর বিরোধী শক্তিশালী একটি প্রতিক্রিয়ার সুচনা করে।

২০০৭ সালে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে স্টাইনম্যানের প্যানক্রিয়াসের কিছু অংশ কেটে ফেলে দেয়া হয়, নিকোলেটের সেই কেটে ফেলা টিউমারের কিছু অংশ দরকার ছিল তার ভ্যাক্সিন তৈরীর কাজ শুরু করার জন্য। স্টাইনম্যানকে এই ভ্যাক্সিনের ট্রায়ালে যোগ দেবার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এবং ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশনের বিশেষ অনুমতি নিতে হয়,নিকোলেট এর টীমকে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে এই অনুমতি জোগাড় করতে হয়। স্টাইনম্যানের টিউমার কোষ পাবার পর এবং আরগোসের ভ্যাক্সিন তৈরী কাজ শেষ হতে, সময় তখন লাগবে বেশ কয়েকমাস। এই সময়টাতে স্টাইনম্যান অন্য চিকিৎসা, প্রচলিত জেমসাইটিবিন-নির্ভর কেমোথেরাপী নিতে শুরু করেন।

২০০৭ এর গ্রীষ্মের শেষ দিকে তিনি যোগ দেন GVAX ট্রায়ালে;এই ভ্যাক্সিনটি যৌথভাবে তৈরী করেছিলেন জন হপকিন্স এর এলিজাবেথ জাফে, হার্ভার্ড এর একটি টীমের সাথে, এটির নিশানা ছিল প্যানক্রিয়াস এর ক্যান্সার,তবে টার্মিনালী প্রোস্টেটের ক্যান্সারের জন্য ছাড়পত্র পাওয়া প্রোভেন্জ যেমন, এটাও তেমনি কোন নির্দিষ্ট না বরং একটি সার্বজনীন টিউমার অ্যান্টিজেন ব্যবহার করে তৈরী করা।এর আগের একটি ফেজ ২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে যারা এই ভ্যাক্সিনটি পাচ্ছে তারা, যারা পাচ্ছেনা তাদের থেকে বেশ কয়েক মাস বেশী দীর্ঘ আয়ু লাভ করে। দুই মাস ধরে স্টাইনম্যান হার্ভার্ড ক্যান্সার সেন্টারে GVAX এর চিকিৎসা পান।

সবার মনেই তখন শঙ্কা স্টাইনম্যান কি আগামী শরৎটা দেখে যেতে পারবেন কিনা।

সবার শঙ্কা দুর করে মোটামুটি ভালোই থাকলেন স্টাইনম্যান। ২০০৭ এর সেপ্টেম্বরে লাসকার পুরষ্কারে পেলেন। একের পর এক টিভি ইন্টারভিউ আর ভিডিও কনফারেন্সে তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে ডেনড্রাইটিক কোষের অপার সম্ভাবনার কথা বললেন:ডেনড্রিইটিক কোষ নির্ভর চিকিৎসা ক্যানসারে প্রচলিত চিকিৎসার চেয়ে অনেক বেশী সুনির্দিষ্ট এবং অনেক কম ক্ষতিকর পার্শপ্রতিক্রিয়াহীন।কিন্তু আরো গবেষনা এবং  ধৈর্যর প্রয়োজন, এর মুলনীতিগুলো বোঝার জন্য।

ছবি: স্টাইনম্যানের ডেনড্রাইটিক কোষ নির্ভর ভ্যাক্সিনের একটি স্কীমাটিক ডায়াগ্রাম ( ছবিটি  বড় করে দেখুন)

এসময় তার সহকর্মীদের তুলনায় স্টাইনম্যানই বেশী ধৈর্য্যর প্রমান দিয়েছেন। তিনি তার সহকর্মীদের সাথে প্রথমে যুক্তি দিয়েছিলেন, যে GVAX তিনি ধীরে ধীরে নেবেন এবং প্রতিটি থেরাপীর মধ্যে তার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কতটুকু বাড়লো  এটা তিনি পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পাবেন। কিন্তু তার সহকর্মীরা তাকে বোঝাতে সক্ষম হলেন,সেটা করার জন্য তাদের হাতে বেশী সময় নেই। কারন তিনি যদি বেচে না থাকেন তাহলে এই পরীক্ষা বা উপাত্ত সংগ্রহ কোনটাই হবেনা।

নভেম্বর ২০০৭ সালে কেমোথেরাপী শেষে স্টাইনম্যান আরগোস এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যোগ দিলেন একক রোগীর স্বতন্ত্র একটি প্রোটোকলে। তার নিজের টিউমার কোষের জেনেটিক উপাদান নিয়ে স্টাইনম্যানের ডেনড্রাইটিক কোষগুলোকে প্রস্তুত করার পর আবার স্টাইনম্যানের শরীরে প্রবেশ করানো হলো। এরপর ২০০৮ এর শরতে পালুকার ভ্যাক্সিনটি তিনি গ্রহন করেন (যেটির মুল নিশানা ছিল মেলানোমা,চামড়ায় হওয়া একধরনের কান্সার); পালুকা তার মেলানোমার জন্য তৈরী করা একটি ডেনড্রাইটিক কোষ ভ্যাক্সিন এর খানিকটা পরিবর্তন করে স্টাইনম্যানের টিউমরের একটি প্রোটিন টুকরা ব্যবহার করে এই কোষগুলোকে নতুন করে প্রোগ্রাম করলেন শুধু স্টাইনম্যানের জন্য।

সারা পৃথিবী জুড়ে স্টাইনম্যানের সহযোগী যারাই এক্সপেরিমেন্টাল চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছিলেন, সবাই স্টাইনম্যানকে তাদের চিকিৎসা নেবার জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। স্টাইনম্যান কয়েক দশক ধরে বিশাল সহযোগী বিজ্ঞানীদের এক বিশাল নেটওয়ার্ক  তৈরী করেছিলেন, তারা সবাই স্টাইনম্যান এর পাশে এসে দাড়িয়েছিলেন। ক্যানসারের প্রচলিত চিকিৎসা ছাড়াও বিশেষ রোগীর শ্রেনীবিভাগে মোট চারটি ভিন্ন ভিন্ন ড্রেনড্রাইটিক কোষ নির্ভর ক্যান্সার চিকিৎসার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যোগ দেন স্টা‌ইনম্যান, যাদের কোনটাই এর আগে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে ব্যাবহার করা হয়নি, এছাড়াও আরো কিছু পরীক্ষামুলক ইমিউনোথেরাপী এবং কেমোথেরাপীও নেন স্টাইনম্যান। এই সব চিকিৎসার মধ্য দিয়েই স্টাইনম্যান তার নিজের উপরই বড় পরীক্ষাটা চালিয়ে যেতে থাকেন ঠিক যেভাবে নিজের ল্যাবে গবেষনা পরিচালনা করতেন।


স্টাইনম্যানের নিজের উপর পরীক্ষা করা কয়েকটি পরীক্ষা মুলক চিকিৎসা 

খুব সাবধানে নিজের শরীরের ডাটা সংগ্রহ করছিলেন তিনি, বিশেষ করে তার শরীর এই সব চিকিৎসায় কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তিনি পালুকাকে তার ভ্যাক্সিন যে কাজ করছে, তা ইনজেকশন সাইটের চারপাশে ফুলে ওঠা জায়গার বর্ণনা দিয়েছেন নিয়মিত। যদিও পালুকা নিশ্চিৎ নন তবে তিনিও তার শিক্ষক স্টাইনম্যানের মত জানতেন, ডেনড্রাইটিক কোষগুলোই রোগ প্রতিরোধের সুচনা করে, যদি শরীরের বাইরে এই  কোষগুলোকে চিনিয়ে দেয়া যায় কার সাথে যুদ্ধ করতে হবে, এই কোষগুলোই শরীরে ফিরে গেলে টি কোষদের টিউমর ধ্বংশ করার কার্যকরী উপদেশ দিতে পারে। এই যুদ্ধ জয়ে কোষগুলোর পক্ষে সুযোগ বাড়িয়ে দেবার জন্যই  মুলত  এই প্রচেষ্টা।

ক্যান্সারের যে বায়োমার্কার, বা যা টেষ্ট করে কোন নির্দিষ্ট ক্যান্সারের অগ্রগতি বোঝা যায়, সেটার পরিমাপ দিয়েই স্টাইনম্যানের মনে অবস্থা বোঝা যেত। পুরো চিকিৎসা সময়কাল ধরেই  তার এই টিউমর মার্কারটি বার বার ওঠানামা করেছে। রোগী স্টাইনম্যানকে যে সংবাদ খুশী করেছে বিজ্ঞানী স্টাইনম্যানকে তা খুশী করতে পারেনি। তার এই একজন রোগীকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট যে বৈজ্ঞানিক গ্রহনযোগ্যভাবে নয় তাকে সারাক্ষনই হতাশ করেছে। এছাড়া এতগুলো ট্রিটমেন্ট একসাথে, এর সাথে কেমোথেরাপী, ঠিক কোনটা যে তার টিউমার মার্কারে মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে, সেটা বলা সহজ ছিল না। তা সত্ত্বে স্টাইনম্যান বেশ চমৎকার কিছু উপাত্ত রেখে গেছেন, পালুকা একটি  ইমিউন মনিটরিং টেষ্ট করার সময় প্রমান পান যে তার শরীরের প্রয় ৮ শতাংশ কিলার টি কোষ সুনির্দিষ্টভাবে তার টিউমরের বিরুদ্ধে কাজ করছে। খুব বেশী মনে না হলেও, আমাদের শরীরের প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হওয়া অসংখ্য রোগজীবানুর বিরুদ্ধে যাদের কাজ করতে হচ্ছে, তাদের মধ্যে ৮ শতাংশ শুধু একটি কাজই করছে ব্যপারটা উডিয়ে দেবার মত না, নিশ্চয়ই কোন একটি চিকিৎসা বা এদের কোনটার সমন্বয় নিশ্চয়ই টিউমরের বিরুদ্ধে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

জুন ২০১১, ৪০ তম বিবাহ বার্ষিকী উৎযাপনের স্টাইনম্যান তার স্ত্রী ক্লডিয়াকে নিয়ে রোম বেড়াতে যান। ততদিনে তার প্রথম সার্জারীর চার বছর পেরিয়ে গেছে, এতদিন এই রোগ নিয়ে বেচে থাকাটাই বিস্ময়কর।  সেপ্টেম্বর ২০১১ এর মাঝামাঝিও স্টাইনম্যান তার ল্যাবে কাজ করেছেন, আরগোসের চিকিৎসাটা আবার শুরু করার কথা ছিল। সেই সময়ই হঠাৎ করে স্টাইনম্যান নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। সেপ্টেম্বর এর ২৪ তারিখ পর্যন্ত্ তিনি তার ল্যাবে ডাটা গুলো রিভিউ করেছেন। কিন্তু অবশেষে শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৩০ তারিখ আর পারলেন না তিনি। নিউমোনিয়ায় মারা যান ক্যান্সারে দুর্বল হয়ে যাওয়া স্টাইনম্যান।

তখনও তার মৃত্যুর খবর তার নেটওয়ার্কে কাউকে জানানো হয়নি । সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইলেন স্ত্রী ক্লডিয়া, তার অসংখ্য সহযোগীদের খবরটা দেবার জন্য।  অক্টোবরের ৩ তারিখ, সোমবার সকালেই  স্টাইনম্যানের নীরব করে রাখা ব্ল্যাক বেরীতে খবর এলো স্টকহোম থেকে, এ বছরের নোবেল পুরষ্কারের জন্য তাকে মনোনীত করা হয়েছে।

সারা পৃথিবীতে তখন নোবেল কমিটির ঘোষনা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া আসছে। স্টাইনম্যান এবং আরো দুজন ব্রুস বিউটলার এবং জুল হফম্যান কে নানা আর্টিকেল এবং বক্তব্যও প্রকাশিত হতে লাগলো আরো বেশ কয়েক ঘন্টা নাগাদ; স্টাইনম্যানের মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হবার আগ পর্যন্ত। নোবেল কমিটি তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে সমস্যায় পড়ে যায়, কারন মরনোত্তর কাউকে পুরষ্কারটি দেয়া হয়না, কিন্তু যদি অক্টোবরে যোষনার পর কোন নোবেল জয়ী ডিসেম্বরের মুল অনুষ্ঠানের আগে মারা যান তবে তিনি বিজয়ীর তালিকায় থাকেন। কিন্তু স্টাইনম্যান মারা গেছেন ঘোষনার মা্ত্র তিন দিন আগে। সেই দিনই দীর্ঘ বৈঠকের পর তারা সিদ্ধান্ত নেন স্টাইনম্যানের নাম নোবেল বিজয়ীর তালিকায় থাকবে।

এর কিছু দিন পর অ্যাপল এর স্টিভ জবস ও ক্যান্সারে মারা যান। খুবই ধীরে ধীরে বড় হওয়া সচরাচর দেখা যায় না এমন একটি ক্যান্সারে, সেটিও স্টাইনম্যানের মত তার প্যানক্রিয়াসে হয়েছিল, প্রায় ৮ বছর বেচে ছিলেন স্টিভ জবস ক্যান্সারটি শনাক্ত হবার পর, এটিও বেশ দীর্ঘ একটি সময়। কিন্তু স্টাইনম্যানের ক্যান্সারটি ছিল আরো ভয়ঙ্কর আগ্রাসী, তার এই বাড়তি সময় বেচে থাকাটা তাই কারো মনে সন্দেহ রাখেনি চিকিৎসায় কোন না কোন কিছু নিশ্চয়ই কাজে লেগেছে।

এখন বিজ্ঞানীরা বুঝতে চেষ্টা করছেন, কি সেটা।


রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ল্যাবে  র‌্যালফ স্টাই্নম্যান  (সুত্র:  Nature (478) 27 October 2011) 

এবছরই কোন এক সময় বেইলর বিশ্ববিদ্যালয় স্টাইনম্যানের সন্মানে তার নামে নামকরন করতে যাচ্ছে তাদের সেন্টার ফর কান্সার ভ্যাক্সিন কে। এবং পালুকা ,যে ভ্যাক্সিন দিয়ে স্টাইনম্যানের চিকিৎসা করেছিলেন সেটাই  প্যানক্রিয়াসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছেন। আর্গোসে নিকোলেট আরো জোরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিডনী ক্যান্সারের জন্য তার ভ্যাক্সিন, যা স্টাইনম্যান ব্যবহার করেছিল, সেটিকে ফেজ ৩ এর ট্রায়ালে নিয়ে যাবার জন্য। স্টাইনম্যানের চিকিৎসার সাথে জড়িত সবাই বুঝতে পেরেছেন, ইমিউনিটি অবশ্য তার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য ঘটিয়েছে। কিন্তু শেষ যে শিক্ষাটি আসলে তাদের শিক্ষক দিয়ে গেছেন, স্টাইনম্যান তার সহকর্মীদের  সবসময়ই বলতেন, এখনও অনেক কিছু আবিষ্কার করা বাকী আছে..এবং আসলে তাই।

____________________________

ক্যাথরিন হারমনের The patient Scientist, Scientific American january 2012;
জাক বাঁশোরোর The long arm of the Immune system, Scientific American November 2002;
মিশেল নুসেনযোয়াইগ এবং ইরা মেলম্যান;Ralph Steinman (1943–2011), Immunologist and cheerleader for dendritic-cell biology; Nature (478);27 October 2011;
Dendritic Cells and the Control of Immunity. Jacques Banchereau and Ralph M. Steinman in Nature, Vol. 392; March 19, 1998.
Taking Dendritic Cells into Medicine. Ralph M. Steinman and Jacques Banchereau in Nature,Vol. 449, September 27, 2007.

মূল লেখাটা পাবেন: এই ঠিকানায়

তথ্যসূত্র : ক্যান্সার ইনফরমেটিকসে প্রকাশিত গবেষণাপত্র

একেকটি জিনের কাজ একেক রকম। কোনো কোনো জিন মানুষের চোখের রং নির্ধারণ করে দেয়। কোনোটি ঠিক করে মানুষের চুল কেমন হবে, কোনোটি ঠিক করে মানুষের উচ্চতা। আবার কোনো কোনো জিন বর্ণান্ধতাসহ বিভিন্ন জটিল ব্যাধির জন্য দায়ী। কিছু কিছু জিন ক্যান্সারের জন্য দায়ী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি গবেষকদল এ রকম একটি জিন প্রস্তাব করেছেন। এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ক্যান্সার ইনফরমেটিকসে। এ গবেষণায় তাঁর সঙ্গে আরো কাজ করেন রুহুল আমিন, জেসমিন এবং হাসান জামিল।

ক্যান্সারের জন্য দায়ী জিনের এই পরিবারটি হলো মেজ বা মেলানোমা এন্টিজেন পরিবার। এ জিনগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষের এঙ্ ক্রোমোজম, তিন ও পনেরো নম্বর ক্রোমোজমে পাওয়া যায়। ড. আনোয়ার হোসেন পাঁচ নম্বর ক্রোমোজমের একটি অংশে, বিশেষ এই জিন প্রস্তাব করেছেন, যা কি না ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। তাঁরা এ গবেষণায় বায়োইনফরমেটিকসের যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, তা আধুনিকতম হলেও জটিল নয়। একনজরে দেখে নেওয়া যাক কিভাবে আবিষ্কৃত হলো এ জিনটি।
ধাপ : ১
বায়োইনফরমেটিকসের এ যুগে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডেটাবেইসে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডিএনএ অনুক্রম (ডিএনএ সিক্যুয়েন্স) জমা রাখা আছে। সেখান থেকে মানুষের পাঁচ নম্বর ক্রোমোজমের একটি অংশ নেওয়া হয় বিশ্লেষণের জন্য। এ জন্য এ নমুনা অংশটির ডিএনএর অনুক্রম নেওয়া হয়।
ধাপ : ২
ভাষার জন্য যেমন ব্যাকরণ আছে ঠিক তেমনই ডিএনএর মধ্যে জিন একটি বিশেষ নিয়মের মধ্যে পড়তে হয়। কোনো জিনের শুরুতে থাকে একটি ‘শুরু’ নির্দেশ। শেষে থাকে ‘শেষ’ নির্দেশ। এ দুই নির্দেশের মধ্যে থাকে জিনের মূল নির্দেশনাটি, যা অনুসরণ করে কোষ কোনো কিছু তৈরি করবে। ডিএনএর মধ্যে কোনো জিন খুঁজতে হলে এ বিশেষ জায়গাগুলো খুঁজে বের করতে হয়। এ জন্য ইন্টারনেটে অনেক প্রোগ্রাম আছে। এ রকম একটি হলো ঘঈইওর ঙজঋ ঋরহফবৎ। এটিসহ অন্যান্য প্রোগ্রাম ব্যবহার করে ক্রোমোজম পাঁচের ব্যবহৃত নমুনা অংশের মধ্যে নতুন দুটি জিন খুঁজে পাওয়া যায়। এদের নাম দেওয়া হয় জিন ২ ও জিন ৩।
ধাপ : ৩
জিন ২ ও জিন ৩ এর ডিএনএর মধ্যে এমন কিছু জায়গা দেখা গেল, যা অন্যান্য পরিচিত অনেক জিনেও দেখা যায়।
ধাপ : ৪
যেসব জিন বিবর্তনীয় দিক দিয়ে কাছাকাছি থাকে, তাদের জিনের মধ্যেও মিল থাকে। বিবর্তনীয় কারণে মানুষ, শিম্পাঞ্জি ও ওরাং-ওটাং অত্যন্ত কাছাকাছি। এই তিনটি প্রাণীর ক্রোমোজম পাঁচ পরীক্ষা করে দেখা গেল এদের জিন ২-এর মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য।
ধাপ : ৫
জিন ২-এর কাজ আসলে কী তা খোঁজা শুরু হয় এ ধাপ থেকে। এ জন্য জিন ২-কে মেজ পরিবারের একটি জিন মেজ ই১ এর সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয়। দেখা যায়, এ জিন দুটির মধ্যে মিল ৩৮ থেকে ৪১ শতাংশ। আপাতদৃষ্টিতে এ মিলটি কম মনে হলেও কোনো জিন পরিবারের সদস্যদের মধ্য অনেক সময় অনুক্রমীয় মিল ২০ শতাংশেরও কম হতে পারে।
ধাপ : ৬

জিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর মধ্যে কোনো বিশেষ অনুক্রম পুনরাবৃত্তি করতে পারে। একেক জিনের পুনরাবৃত্তির ধরন একেক রকম। জিন ২ এবং মেজ ই১ জিনের মধ্যে একই ধরনের পুনরাবৃত্তি খেয়াল করা যায়।
ধাপ : ৭
জিন থেকে তৈরি হয় প্রোটিন। প্রোটিন গঠনের অনেক ধাপ থাকে। যেসব প্রোটিন একই ধরনের কাজ করে তাদের গঠন একই বা কাছাকাছি ধরনের হয়ে থাকে। এ ধাপে জিন ২ এবং মেজ ই১ জিনের দ্বিমাত্রিক গঠন তুলনা করে উল্লেখযোগ্য মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ধাপ : ৮
এই সর্বশেষ ধাপে জিন দুটির বিভিন্ন জৈবিক, আণবিক ও কোষীয় বৈশিষ্ট্য তুলনা করা হয়। এ ধাপেও তাদের মধ্যে বিভিন্ন মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে সংগতভাবেই অনুমান করা যায় যে জিন ২-টি মানুষের টেলোমারেজ উৎসেচকটিকে অনিয়ন্ত্রিত করে ক্যান্সারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ উৎসেচক অনিয়ন্ত্রিত হলে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি হয়ে ক্যান্সার হতে পারে। এ জিনটির সঙ্গে মেজ পরিবারের জিনের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে সত্যি সত্যিই এ জিনটি ক্যান্সারে যুক্ত কি না তা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে।
আমরা এমন একটি সময়ে বসবাস করছি যখন মানুষে সম্পূর্ণ ডিএনএতে কী লেখা আছে তা জানা হয়ে গেছে। এখন জীববিজ্ঞানীদের লক্ষ্য এ ডিএনএর পাঠোদ্ধার করা। মানুষের বেশ কিছু জিন আবিষ্কার হয়ে গেলেও এখনো এ কাজের বাকি অনেক। বায়োইনফরমেটিকস এ কাজের একটি প্রধান হাতিয়ার। বাংলাদেশে বায়োইনফরমেটিকস এখন শৈশব পার করছে। তবে আশার কথা, ইতিমধ্যে অনেক তরুণের মধ্যে আগ্রহ সঞ্চার করেছে বায়োইনফরমেটিকস। সম্প্র্রতি বাংলাদেশে পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের মতো বড় কাজ হয়ে গেছে। পাশাপাশি ক্যান্সারের জিন আবিষ্কারের সম্ভাবনা একটি বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে।


মূল লেখাটা পাবেন: এই ঠিকানায়

 

সারাবিশ্বের মতো ৪ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়েছে।  দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিলো, ‘টুগেদার ইট ইজ পসিবল অর্থাৎ সবাই মিলে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব।

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ওবায়েদুল্লাহ বাকী জানান, দেশে বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। প্রতিবছর এ রোগে দেশে প্রায় দুই লাখ লোকের মৃত্যু ঘটে। বছরে আক্রান্ত হয় প্রায় তিন লাখ মানুষ।  এই রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, মুখগহ্বর, রক্তনালি, জরায়ু ও স্তনে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। মহিলা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগ জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত।

তিনি আরো বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা একেবারেই নাজুক পর্যায়ে রয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুসারে মোট জনসংখ্যার দিক থেকে দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থাসম্পন্ন কমপক্ষে দেড়’ শ (১০ লাখে একটি ধরে) সেন্টার থাকা অপরিহার্য। সেখানে আছে মাত্র ১৮টি। বেশির ভাগ সেন্টারে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হচ্ছে তা এখন আর কার্যকর নয়।

ক্যান্সার নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি ও বেসরকারি সূত্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন ১১০ জনের মতো। অনকোলজিস্ট নার্স নেই।

সরকারিভাবে সারা দেশে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য পাঁচ শর মতো বেড রয়েছে। কমপক্ষে ৩০০টি যন্ত্র অপরিহার্য হলেও দেশে এমন যন্ত্র রয়েছে মাত্র। ১৫টি। এর মধ্যে আধুনিক লাইন্যাক মেশিন আছে মাত্র পাঁচটি । পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দু-একটিতে অত্যাধুনিক কিছু যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, `ক্যান্সারের চিকিৎসক বলতেও রেডিও থেরাপির সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদেরই বোঝানো হয়। ক্যান্সার চিকিৎসায় এখন তাঁদের পাশাপাশি সার্জিক্যাল ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট একেবারেই অপরিহার্য, কিন্তু আমাদের দেশে এমন কোনো বিষয়ই নেই।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হলো তামাক। মানুষের খাদ্যাভ্যাসের কারণেও ক্যান্সার ছড়ায়। খাবারে বিষ, মাছে ফর্মালিন, ফল পাকাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার হচ্ছে যথেচ্ছ হারে। এসব রাসায়নিক শরীরে গিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস যকৃতে সিরোসিসের কারণ। যকৃত সিরোসিস প্রতিরোধের জন্য রয়েছে টিকা। কিন্তু দাম বেশী।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারিভাবে বয়স্কদের জন্য হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন দেয়া হলে এর দাম কমে যেতে পারে।

হেলিকো ভ্যাক্টর পাইলেরি পাকস্থলী ক্যান্সারের কারণ, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস জরায়ু ক্যান্সারের কারণ। এরও টিকা রয়েছে।

জরায়ু ক্যান্সারের টিকা বেসরকারিভাবে কিনে দিতে হলে প্রতিটির পেছনে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। সরকারিভাবে দেয়ার ব্যবস্থা করলে এর দাম পাঁচ থেকে ছয়শ’ টাকায় নেমে আসতে পারে।

ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মকৌশল প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ল্যাব এইড হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ২৫ শতাংশ ক্যান্সার মৃত্যুর হার কমাতে হলে সরকারকে জরুরিভাবে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য রোগ প্রতিরোধ করা, সূচনাতে রোগ নির্ণয়সহ চিকিৎসার জন্য রেডিও থেরাপি মেশিন ও স্বল্পমূল্যে কেমোথেরাপি ওষুধ রোগীদের জন্য সরবরাহ করতে হবে।

মূল লেখাটা পাবেন: এই ঠিকানায়

আজ জরায়ুর ক্যান্সার নিয়ে আলোচনা করা হবে। আর কেন এ ক্যান্সার নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে এ ব্যাপার তা জেনে নেই আলোচনার শুরুতেই। হ্যাঁ এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কারণটি এই যে, আমাদের দেশে যত ক্যান্সারের রোগী তাদের মধ্যে অর্ধেকেরই বেশি জরায়ু ক্যান্সারে ভুগছেন। আর এ ব্যাপারে আলোচনা করবেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাহেনাজ আফরোজ।
আলোচনার শুরুতেই এ ক্যান্সার কতো প্রকোপ আকার ধারণ করেছে সে বিষয় একটা হিসেব দেয়া যায়। সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, ৩০ শতাংশ নারী জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে । পৃথিবীতে ক্যান্সারে যত মহিলার মৃত্যু হয়, তার এক-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রেই ঘাতক হল জরায়ু মুখের ক্যান্সার। প্রতি দিন অন্তত ২০০ মহিলার মৃত্যু হচ্ছে এই অসুখে। প্রতি ঘণ্টায় মারা যাচ্ছেন অন্তত আট জন। বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তারপরও মনে করা হয়, দেশে মোট ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর মধ্যে ২২ থেকে ২৯ শতাংশই জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। আলোচনার শুরুতেই বলে নেয়া ভাল যে চিকিৎসকা বিজ্ঞানীরা বলেন, নারীর জরায়ু আবরণীর কোষগুলোতে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে এবং এ সব পরিবর্তন ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপ নিতে অনেক সময় ১০-১৫ বছর পর্যন্তও লেগে যায়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগটি চিহ্নিত করা সম্ভব হলে রোগের চিকিৎসা সম্ভব।
জরায়ুর ক্যান্সার দু’ধরণের। এক ধরণের ক্যান্সার জরায়ুর মুখে হয় আরেক জাতের ক্যান্সার হয় জরায়ুর ভেতরে । মেয়েরা ভিন্ন দুটি বয়সে জরায়ুর দুই ধরণের ক্যান্সারের শিকারে পরিণত হয়। আর এ কারণেই জরায়ুর ক্যান্সারকে দুই ভাবে ভাগ করা হয়। এ ছাড়া এই দুই ক্যান্সারের উপসর্গ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন। সাধারণভাবে জরায়ুর মুখের ক্যান্সার তুলনামূলকভাবে অল্প বয়সে এবং জরায়ুর ভেতরে যে ক্যান্সার তা বেশী বয়সে হয়। বহুল প্রচলিত একটি কথা হলো, ক্যান্সার নো এ্যান্সার। আসলে যে কোনো ক্যান্সার দেহে ছড়িয়ে পড়লে তার হাত থেকে নিস্কৃতি পাওয়া খুবই কষ্টকর । তবে জরায়ু-মুখের ক্যান্সার নিয়ে একটু ব্যতিক্রম আছে। কারণ এই ক্যান্সারকে সূচনাতেই শনাক্ত করা সম্ভব। আর সূচনাতে যদি শনাক্ত করা যায় তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগকে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব। অন্যদিকে জরায়ুর ভেতরে যে ক্যান্সার হয় তা মহিলাদের বেশি বয়সে দেখা দেয়। এ ছাড়া এ রোগ শনাক্ত করাও সহজ নয়। সব মিলিয়ে যদি এ রোগ যখন ধরা পড়ে তখন দেখা যায় এরই মধ্যে রোগটি দেহে ছড়িয়ে পড়ছে। মাথা ব্যাথার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেকেই মাথা কেটে ফেলার কথা বলেন। মাথা কাটা তো কোনোভাবেই সম্ভব না। তবে এখানে এ কথাটি টেনে আনার কারণটা হলো, জরায়ু কেটে ফেলা হলে জরায়ুর ক্যান্সারের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। আমাদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ডা.মাহেনাজ আফরোজ বলেন, একটি বিশেষ বয়সের পর নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা আর থাকে না। এটি সাধারণ ভাবে ৪৫ থেকে ৫০ বছরের হয়ে থাকে। কিন্তু জরায়ুর মুখের ক্যান্সার এই বয়সে পৌঁছানোর আগেই দেখা দেয়। যে সব মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয় বা যাদের ঘন ঘন সন্তান হয় তাদের মধ্যে জরায়ুর ক্যান্সার বেশি হয়। অন্যদিকে পাশ্চাত্যে নারীদের অধিকা হারে সঙ্গী থাকার কারণে এই ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আংশকা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে জরায়ুর মুখে ক্যান্সারের প্রকোপ খুব বেশি হলেও জরায়ুর ভেতরের ক্যান্সারের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম। এই ক্যান্সার সাধারণভাবে একটি বিশেষ বয়সের পরে দেখা দেয়। এ কারণে আগে ভাগে জরায়ু ফেলে দিয়ে এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা ভাবা হয়ত ঠিক হবে না।

জরায়ুর মুখের ক্যান্সারে প্রথম দিকে তেমন কোনা উপসর্গ থাকে না। কিন্তু এই রোগ একটু ছড়িয়ে পড়লে তখন কিছু কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের সেরা পদ্ধতি হলো প্যাপ টেস্ট। জরায়ুর মুখের লালা নিয়ে এই পরীক্ষা করা হয় এবং এটি অতি সাধারণ একটি পরীক্ষা। ২০ বছরের পর প্রতিটি মেয়ের এই পরীক্ষা নিয়মিত করানো উচিত। যদি কোনো মেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিতভাবে, অর্থাৎ তিন বা ৫ বছর অন্তর অন্তর এই পরীক্ষা করান তবে তার জরায়ুর মুখে ক্যান্সার সূচনাতেই ধরা পড়বে। প্রাথমিকভাবে এ রোগের কোনো উপসর্গই আর সুচনাতেই ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ থেকে মু্ক্তি পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া জরায়ু ক্যান্সারের টিকা বের হয়েছে-যা ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে নিয়ে নেয়া যায়। তবে এ টিকা পাশ্চাত্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে তার ব্যাপক প্রচলন ঘটে নি। অন্যদিকে জরায়ুর ভেতরের ক্যান্সার নারীর বেশি বয়সে হয়। সাধারণভাবে সন্তান ধারণের বয়স পার হওয়ার পর এই ক্যান্সার দেখা দেয়। এই ক্যান্সারের অন্যতম উপসর্গ হলো, বয়সের কারণে যে নারীর পিরিয়ড বা মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে। তা আবার দেখা দেয়। কিংবা নির্দিষ্ট বয়সের পরে যাদের পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কথা তা বন্ধ না হয়ে বরং নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে তা চলতে পারে। এ রকম কোনো উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্র চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ জরায়ুর যে কোনো ক্যান্সার ধরা পড়লে জরায়ু ফেলে দিতে হবে এবং তা শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা দেখতে হবে। ক্যান্সার এভাবে ছড়িয়ে পড়লে কেমোথেরাপি এবং রেডিও থেরাপির আশ্রয় নিতে হবে।

আজকের আলোচনা থেকে একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেলো যে, জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের প্রকোপ বেশী এবং এ রোগ সূচনাতেই ধরা পড়লে তা চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। আর এ রোগ হয়েছে কিনা সেটি নির্ণয় করা মোটেও কষ্টসাধ্য বা ব্যয় বহুল নয়। তাই সবাই এ রোগের ব্যাপারে সচেতন হবেন এবং প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন।

মূল লেখাটা পাবেন: এই ঠিকানায়

 
এই লেখাটি ঠিক বিজ্ঞানের নয়। প্রথমত বিজ্ঞান লিখতে গেলে খানিকটা জানতে হয়। ক্যান্সার সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। খানিকটা পড়াশোনা করে জানার চেষ্টা করা যেত, সময় নেই! এই লেখাটা ফাঁকতালে শ্বাস নেয়ার মতো। ভয়াবহ ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কয়েকদিন বিষয়টা খুব ভাবাচ্ছে। একটা অস্বস্থি ভর করে আছে মাথায়। ভাবতে ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষ হয়ে না জন্মালেই ভালো হতো। মানুষ সভ্য প্রাণী নয়। বুদ্ধিমান হয়েও সে সভ্য নয়, এই অপরাধের দায় সে অস্বীকার করতে পারেনা! বলে রাখা ভালো, এই লেখাটি অগোছালো। ঝট করে লিখে ডুব দেবো। বিজ্ঞান পড়ার আশা করে কেউ পড়তে শুরু করলে হতাশ হবেন। কোনোকিছু আশা করলেই হতাশ হবেন।


ক্যান্সার ব্যপারটা নিশ্চয়ই কারো জানতে বাকি নেই। আরেকবার মনে করিয়ে দেয়া যেতে পারে। সবপ্রাণির শরীরের সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় খুব কড়াভাবে নিয়ন্ত্রিত। সবখানেই একটা সাম্যবস্থা থাকে। সেই সাম্যবস্থায় গণ্ডগোল হলে বিপদ। ভয়াবহ বিপদ। মানুষের কথা বলি,

মানুষের কোষের নিজস্বতা আছে। শরীরের বাইরেও কোষকে খাবার দিয়ে পালা/পোষা যায়। কেউ চাইলে নিজের খানিকটা কোষ নিয়ে বোতলে পালতে পারে। আরামদায়ক তাপমাত্রায় রেখে নিয়ম করে খাবার দিতে হয়। আর দেখতে হয় যেন ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস কোষ মেরে না ফেলে।

কোষেরা বৃদ্ধিপায় নিজেরা ভাগ হয়ে। একটা থেকে দুটো, দুটো থেকে চারটে এভাবে। শরীরে কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত। কোষের সবকিছু যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করে তার ডিএনএ। তাই তার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করার দ্বায়িত্বও থাকে ওই ডিএনএ’র উপর। ডিএনএ হচ্ছে কোষের সংবিধান। কোষের ভালোমন্দ বিচারের ক্ষমতা নেই। সংবিধানে যা লেখা থাকে সে সেই মত কাজ করে। সংবিধানের অর্থবোধক একেকটা অংশকে বলে জিন। যে অংশে কোষের খাওয়া দাওয়া কীভাবে হবে লেখা থাকে সেটা তার খাওয়া নিয়ন্ত্রণকারী জিন। যেটাতে বৃদ্ধি পাওয়ার নিয়মকানুন লেখা থাকে সেটা তার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী জিন।

কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী জিনটা নষ্ট হয়ে গেলে সে আর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সমানে বাড়তে থাকে।

শরীরের কিছু রক্ষী কোষ আছে যারা এরকম বিগড়ে যাওয়া কোষ মেরে ফেলে। কিন্তু শরীরের রক্ষী কোষেরা যদি এরকম বিগড়ে যাওয়া কোষকে মেরে ফেলতে না পারে, তখন?

তখন সেটা ক্যান্সার।

ওই বিগড়ে যাওয়া কোষ উপযুক্ত পরিবেশে অনন্তকাল বাড়তে পারে। কিন্তু অনন্তকাল সে উপযুক্ত পরিবেশ পায়না। তার আগেই সে বাড়তে বাড়তে শরীরের অন্য কোষের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। তারপর যে শরীরের সে অংশ ছিল সেটাকেই মেরে ফেলে। ব্যপারটা আত্মহত্যার মতো। কোনো যুক্তি নেই। কিন্তু সেটাই হয়। ২০০৮ সালে পৃথিবীর প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে মেরে ফেলেছে তাদেরই একম বিগড়ে যাওয়া কোষ। মৃত্যুর এই হার বাড়ছে। বিশ্বাস করুন, ভয়াবহ গতিতে বাড়ছে। আবেগ তাড়িত হয়ে বলছি না। সত্যি সত্যি বলছি।

ক্যান্সার শুরু হয় একটি কোষ থেকে। ওই একটি কোষ কীভাবে বিগড়ায়?

না জানা অনেক কারণে বিগড়াতে পারে। হয়তো একা একাও। এমনিতে কারসিনোজেনের প্রভাবে বিগড়ায়। কার্সিনোজেন বলে সেইসব জিনিসকে যা কোষের জেনেটিক গঠন বিগড়ে দিয়ে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। আফলাটক্সিন বলে একরম ছত্রাকের বিষ একটা কার্সিনোজেন। ‘এসবেস্টস’ কার্সিনোজেন। এই জিনিসটি আমাদের দেশে ঘরের চালে ব্যাবহৃত হত বলে জানি! অন্তত সেটার নাম ছিল এসবেস্টস। সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি কার্সিনোজেন। আমরা সবাই মিলে বাতাসের ওজন স্তর নষ্ট করে ফেলেছি যেটা আমাদের এই রশ্মি থেকে বাঁচাতো। এখন অতি বেগুনি রশ্মি নির্বিবাদে আমাদের গায়ে এসে লাগে। আয়োনাইজিং রেডিয়েশন (বাংলা জানি না) একপ্রকার কার্সিনোজেন। আমার ভাগ্নের খেলনা দেখেছিলাম অন্ধকারে জ্বলে। তাতে কী দেয়া ছিল কে জানে! হয়তো ক্ষতিকর কিছু নয় কিন্তু আমি খুব ভীতু বলে সেই খেলনা বাতিল করে এসেছি! আরসেনিক একটা কার্সিনোজেন। কিছু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবিও কারসিনোজেন। সিগারেটের ধোঁয়ায় একটা কার্সিনোজেনের ককটেল থাকে। অনেক রকম কার্সিনোজেনের মিশেল। যিনি সিগারেট খান তার হাতে পায়ে চুলে জামায় সবখানে ওই কারসিনোজেন লেগে থাকে। তার পরিবারের সবাই সেটার ভাগ পায়।

ঢাকায় আমরা মোটামুটি কারসিনোজেনে ডুবে থাকি। বাতাসে বিষ, খাবারে বিষ, পানিতে বিষ! ২০৩০ সালে অন্তত ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারে মারা যাবে। এদের বেশিরভাগই মারা যাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে।

সম্প্রতি সংক্রামক ক্যান্সারের কথা জানলাম। অনেক দেরিতেই জানলাম। Elizabeth Murchison-এর দেয়া একটি বক্তৃতা থেকে জানলাম। উনি বললেন কীভাবে তাসমানিয়ান ডেভিল নামের একটা প্রাণি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই সংক্রামক ক্যান্সারের কারণে! আমি খুব ভয় পেয়েছি। ভাবতেই ভয় লাগছে।

আমাদের এই শহরে আমরা এখন মোটে তিনজন বাংলাদেশি। একজন আমার বড়, আরেকজন ছোট। আমার ছোট ভাইটির ছোটবোন, বাচ্চা একটা মেয়ে। সেদিন শুনলাম তার ক্যান্সার হয়েছে। বাচ্চা একটা মেয়ে! এতো অসহায় লাগে! মেয়েটির কীরকম লাগছে! এতো কষ্ট কীভাবে সহ্য করছে সে! অসহায়ত্বের অসহ্য কষ্টটা কী তার না পেলেই হতনা! ঈশ্বর কী করেন! কোথায় তিনি!

আমি ইনফেকশন বায়োলজি সংশ্লিষ্ট বলে খবরগুলো চোখে পড়ে। রোজ রোজ নতুর রোগ বের হচ্ছে। রোজ রোজ তাকিয়ে দেখছি মানুষের অসহায়ত্ব। সেটা অবশ্য বেশিরভাগেই দেখছে না। সে বরং ভালোই। কী দরকার আতঙ্কে থেকে! অথচ একই সঙ্গে আমি বিজ্ঞানের বিস্ফোরণও দেখছি। মানুষের ক্ষমতা এখন আকাশ ছোঁয়া। মানুষ যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। বিশ্বাস হওয়ার কথা নয়, সন্দেহ হওয়ার কথা। আমি জীববিজ্ঞানের ছাত্র না হলে আমারো বিশ্বাস হতো না। কীভাবে বিশ্বাস করাবো জানিনা। কথাটা আরেকবার বলি বরং, জীববিজ্ঞানীরা এখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। আবার বলি, যা ইচ্ছে তাই।

ক্যান্সার সারাতে পারেন না? আরো যে এত এত রোগ?

পারেন। কিন্তু সেটার জন্য কাজ তো করতে হবে। ক্যান্সার নিয়ে হাজারো প্রশ্ন। উত্তর পেলেই ক্যান্সার থেকে মুক্তি। উত্তর পেতে সেই চেষ্টাটা কে করছে? গুটিকয়েক মানুষ করছেন। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা গুটিকয়েক! বাংলাদেশে ক্যান্সার গবেষণার কী আছে? সারা পৃথিবীতেই তো কতো সামান্য আয়োজন! আহারে, আমরা ভাবতে কষ্ট হয়। এটা এমন কিছু না! সবই তো দেখা যায়, জানা যায়! আমরা চাইলেই পারতাম!

এমনিতে কিছু রাষ্ট্রের টাকা নেতারা খায় আর কিছু রাষ্ট্রের টাকা তারা আরেক রাষ্ট্রের মানুষেকে মেরে ফেলার প্রস্তুতি নিয়ে শেষ করে। সব রাষ্ট্র কুকুর পোষে। তারা খানিক করে মানুষ মারে আর বিবৃতি দেয়। শুওরেরবাচ্চারা খালি বিবৃতি দেয় আর বাচ্চা দেয়। একটা মানুষ বাঁচিয়ে দেখাক কতো ক্ষমতা! তাতে নেই। এরা খালি সংখ্যায় বাড়ে। অনবরত বাড়ে।

আমার খুব অসহায় লাগে। আমরা চাইলেই পারতাম। আমরা মানুষ। চাইলেই হেরে যাওয়া ক্যান্সারের দিকে তাকিয়ে খ্যা খ্যা করে হাসতে পারতাম, কিন্তু তা পারিনা। আমরা হেরে যাই। ক্যান্সারের কাছে হেরে যাই। আমি আমার চারপাশে তাকিয়ে দেখি। আমার মা, আমার বোন, আমার বাবা, আমার বন্ধু, আমার একরত্তি ভাগ্নে, আমার সুহৃদ, আমার স্বজন। আমাদের অনেকেরই ক্যান্সার হবে। তারপর আমরা হারানোর বেদনায় নীল হয়ে থাকবো। আমাদের শান্তনা দেয়ার কোনো ভাষা থাকবে না। আমরা কেবল কিছুই হয়নি, কিচ্ছু হবেনা, এরকম ভান করতে থাকবো।

আমার মতো কেউ কেউ হয়তো তীব্র ঘৃণা পুষে পুষে ক্লান্ত হয়ে যাবে। বুঝে যাবে পৃথিবী মানুষের নয়। অথবা অকথ্য ব্যাথায় স্থবির হয়ে থাকবে। তবে তাতে কিছু এসে যাবে না। ঘৃণা বস্তুত অর্থহীন আবেগ! তাতে কারো কিছু এসে যায় না! এই গ্রহের অনেকেই মৃত্যু দেখে হাসতে পারে। সুখে থাকতে পারে।

পুনশ্চ: এরকম অগোছালো উটকো লেখা কে পড়বেন জানিনা। খানিকটা অস্বস্থি উগরে দিয়ে সুস্থির হওয়ার প্রয়োজন ছিল। তাই লিখলাম। আরেকবার পড়ে দেখাও হচ্ছে না। অসংখ্য ভুল হয়েছে নিশ্চয়ই। সেসবের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। কেউ যদি মন্তব্য করেন, সেটার জবাব দিতেও দেরী হবে। সচলায়তনে আমি ব্যক্তিগত ধরনের লেখা সাধারণত লিখিনা। এটা লিখলাম খানিকটা অস্বস্থি আর ঘৃণা ভাগ করে নেয়ার জন্যে। কোনো যোগ্যতা ছাড়াই এখানে আমার অনেক স্বজন।

মূল লেখা পাবেন: এই ঠিকানায়

বছরের পর বছর একই স্থানে শাড়ির গিঁট বাঁধা নারীস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি নিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা। তারা ত্বকের এই সমস্যার নাম দিয়েছেন শাড়ি ক্যান্সার।

ইনডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাময়িকীর নভেম্বরের সংখ্যায় এই নিয়ে একটি লেখা ছাপা হয়েছে, যা নিয়ে সোমবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

শাড়ি ক্যান্সার নিয়ে গবেষণারত মুম্বাইয়ের গ্রান্ড মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক জি ডি বকশী জানান, গত দুই বছরে তিনি তিন জন কোমরের ত্বকের ক্যান্সারের রোগী পেয়েছেন।

তিনি এর নাম শাড়ি ক্যান্সার দিয়েছেন। তবে এই বিষয়টি নিয়ে এখনো তেমন সচেতনতা গড়ে না ওঠেনি বলে মনে করেন তিনি।

শাড়ি কীভাবে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে, তা জানিয়ে ডা. বকশী বলেন, শাড়ি পরা হয় পেটিকোটের ওপর। পেটিকোটটি সাধারণত সরু একটি সুতা দিয়ে বাঁধা হয়। তার ওপর পড়ে শাড়ির গিট। দীর্ঘদিন ধরে একইভাবে পরার ফলে কোমরের ছোট একটি জায়গার ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে এবং ত্বক স্বাভাবিক রঙ হারাতে থাকে।

“সমস্যাটি জটিল না হওয়া পর্যন্ত কেউ চিকিৎসকের কাছে আসেন না,” বলেন তিনি।

শাড়ির ক্ষেত্রে এই ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিলেও প্যান্ট কিংবা বেল্ট পরলে তা হয় না কেন- জানতে চাইলে বকশী বলেন, “প্যান্টের ক্ষেত্রে বেল্টের প্রস্থ বেশি হয়, ফলে কোমরের বড় অংশ জুড়ে চাপ ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু পেটিকোটের রশিটি হয় অত্যন্ত সরু।”

যারা শাড়ি পরেন, ঝুঁকি এড়াতে তাদের গিঁট খুব টাইট না করতে এবং রশির প্রস্থ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

তারা বলছেন, অভ্যাস বদলালেই যেহেতু ঝুঁকি এড়ানো যায়, তাই সহজেই এই ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর সমস্যা হলে প্রয়োজন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।