Archive for মার্চ, 2012

মূল লেখাটা পাবেন: এই ঠিকানায়

 

প্রোস্টেট ক্যান্সার নিয়ে অনেক গবেষণা হয়, লেখা জোখাও হয়। মাঝে মাঝে আশাপ্রদ ফলাফলও পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে গত বছর একটি পরীক্ষামূলক ওষুধ আরিবাটেবোনের’ কথা শোনা গেলো, অপ্রসর ক্যান্সারেও কার্যকর হবে এমন ভরসার কথা। তবে ওষধুটি ব্যয়বহুল হবে, বলা বাহুল্য।
প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও নিরূপনী নিয়েও অশাব্যঞ্জক কথা বার্তা শোনা গেলো। বিলেতের ক্যাম্ব্রিজের ক্যান্সার গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন মূত্রের নমুনায় একটি সহজ পরীক্ষা যা থেকে বোঝা যাবে কোন পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি। অবশ্য টেস্টটি কত কার্যকর এনিয়ে বিস্তৃত জানা যায়নি এখনও।

গবেষকরা দেখিয়েছেন যে ইউরোপীয় ৩০-৪০% লোকের রয়েছে এমন জীন প্রজাতি যার জন্য এদের এই ক্যান্সারের ঝুকি বেশি। তরুণ বয়সেই মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করে এই ঝুঁকি সম্বন্ধে জানা যায়। মূখ্য গবেষক ডা: হেইলি হুইটেকার বলেন এসব কথা। তবে এই ভেবিয়েট থাকলেই ক্যান্সার হবে, না থাকলে হবেনা, তাও নয়। তাই স্ক্রিনিং টেস্ট হিসাবে এর মূল্যবান প্রশ্ন সাপেক্ষ।

এখন রোগ নির্ণয়ের ব্যাপার। ক্যাম্ব্রিজ ইউকে গবেষকরা দেখছেন প্রোটিনে গঝগই নামে একটি প্রোটিন। তারা দেখেছেন, প্রোস্টেট ক্যান্সার যাদের, তাদের মূত্রে সেই প্রোটিন কম। ছোট একটি গবেষণায় তাঁরা মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করে ৫০% নিভর্ূল নিরূপন করতে পেরেছেন, একে অত্যন্ত আশাপ্রদ অগ্রগতি মনে না হলেও বর্তমান নির্ণয় পদ্ধতির চেয়ে কম নিভূল তা বলা যাবেনা, বর্তমানের পদ্ধতি হলো পিএসএ টেস্ট, রক্তে পিএসএ প্রোটিনের মাত্রা নির্ণয়। এই টেস্টকে ৪ জনের মধ্যে একজনে সঠিকভাবে নিরূপন করা যায়, অর্থাৎ অনেককে অনাবশ্যক বায়োপসির ঝক্কি নিতে হয়। রক্তে পিএসএ এবং মূত্রে এমএসএমবি টেস্ট করে আরো সঠিক নিরূপনী সম্ভব।

 

by সরোয়ার

দেশের সবচেয়ে নন্দিত লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর হুমায়ুন আহমদ দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে আমেরিকায় চিকিৎসাধীন আছেন। পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন। হাসপাতালের বেডে শুয়েও তিনি সেখানকার পরিস্থিতি পত্রিকার মাধ্যমে তাঁর অগনিত পাঠকদের সাথে ভাগ করছেন। ক্যান্সার চিকিৎসা যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চরম বাস্তবতাটি আমরা তাঁর লেখার মাধ্যমে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছি। নিঃসন্দেহে বিদেশে  ক্যান্সার চিকিৎসা অত্যন্ত উন্নতমানের। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। এই অবস্থা অনুধাবন করে তিনি দেশে বিশ্বমানের একটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তাঁর এই মহতী ইচ্ছাকে সাধুবাদ জানাই। তবে সুদূরপ্রসারী আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে এই বিশ্বমানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটি সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু সুফল বয়ে আনবে, কিংবা আনলেও তা আসলেই বেশী মঙ্গলজনক হবে কিনা, তা আলোচনার দাবী রাখে।

ক্যান্সার চিকিৎসা কেমন ব্যয়বহুল?  বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্যান্সার চিকিৎসার বিরাট ভূমিকা আছে। বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার চিকিৎসায়  প্রতিবছর প্রায় ২১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়; বাংলাদেশী টাকায় এর অর্থমূল্য হচ্ছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ২৩০ কোটি টাকা! এটি বাংলাদেশের বাজেটের তুলনায় নয়গুনেরও বেশী (চলতি  বছর আমাদের দেশের বাজেট হচ্ছে ২২ বিলিয়ন ডলার)। আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের (NCI) তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালে ক্যান্সার চিকিৎসায় শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ব্যয় হয়েছে ১২৪ বিলিয়ন ডলারের বেশী। প্রতিবছর চিকিৎসায় ব্যয় ক্রমশঃ বাড়ছেই। ২০২০ সাল নাগাদ এই ব্যয় দাঁড়াবে ১৫৮ বিলিয়ন ডলারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে আমেরিকার ২ লক্ষ ৩০ হাজার ক্যান্সার রোগীর প্রায় ৫০০০ জন অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন।  বেশীরভাগ ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে না। শেষ পর্যায়ের ক্যান্সার চিকিৎসায় সাধারণত কেমোথেরাপি দেয়া হয়। আমেরিকায় কয়েক সপ্তাহের কেমোথেরাপি নিতে কমপক্ষে খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ  ডলার (৭৬ লক্ষ টাকা)। ক্যান্সারভেদে খরচের তারতম্য হতে পারে। ক্যান্সার যাতে পুনরায় প্রত্যাবর্তন না করে এজন্য প্রতিনিয়ত ড্রাগ সেবন করতে হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ড্রাগের জন্য ব্যয় হয়। বিভিন্ন ক্যান্সারের ড্রাগ সংক্রান্ত ব্যয়ের নমুনা (হাসপাতালের  যথারীতি চার্জ বহির্ভূত) তুলে ধরা হলো-

প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে বছর প্রতি ক্যান্সার ড্রাগের জন্য খরচ তালিকা     ফুসফুসের ক্যান্সার ড্রাগ (Tarceva) সেবনে- ২৭ লক্ষ টাকা স্তন ক্যান্সার ড্রাগ (Herceptin) সেবনে-   ২৯ লক্ষ টাকা কোলন ক্যান্সার ড্রাগ (Avastin) সেবনে- ৪১ লক্ষ টাকা কোলন ক্যান্সার ড্রাগ (Erbitux) সেবনে- ৮৪ লক্ষ টাকা   বস্তুত, ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা না পড়লে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন। তাই ক্যান্সারের চিকিৎসায়  জীবনের শেষ সময়কে বর্ধিত করার  প্রয়াস চালানো হয়। এ প্রসংগে ড হুমায়ুন আহমদের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (Sloan-Kettering Cancer Center) চিকিৎসকের অভিমত হচ্ছে-

Some of the most expensive drugs may only extend the patient’s life a few months or a year

অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে বিশ্বমানের চিকিৎসা ব্যয় অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় কম। উদাহরণস্বরূপ, শেষ পর্যায়ের ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা করাতে আমেরিকাতে সাধারণত US ২৩৫,০০০ ডলার খরচ হয়, কিন্তু সিংগাপুরে একই ট্রিটমেন্ট করাতে খরচ হয় US ৭২,০০০- ৯০,০০০ ডলার (যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৬০ লক্ষ। হিসেবটা কয়েক বছর আগের)।

ক্যান্সার চিকিৎসা কেন এত ব্যয়বহুল?   আমেরিকার টাফট (Tuft) বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, একটি ক্যান্সার ড্রাগের গবেষণা থেকে শুরু করে বাজারে আসতে কমপক্ষে ৮০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এর জন্য কমপক্ষে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। ‘The $800 Million Dollar Pill’ নামক বইয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। চল্লিশ বছর আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ‘ন্যাশনাল ক্যান্সার অ্যাক্ট’ স্বাক্ষর করার পর থেকে শুধুমাত্র ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট (NCI) এ পর্যন্ত ক্যান্সার গবেষণায় ১০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্যান্সারের  গূঢ় রহস্য জানা। কিন্তু ক্যান্সার এতই জটিল ধরণের রোগ যে এ পর্যন্ত ক্যান্সার বায়োলজি সম্পর্কে তেমন ভাল ধারণাও লাভ করা সম্ভব হয়নি। ক্যান্সার কেবল একটিই রোগ নয়, এটি বহুবিধ রোগের সমষ্টি। আমার অভিজ্ঞতাই বলি। পেশাগত জীবনে আমি পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো হিসেবে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টারে কাজ করছি। আমার মত ক্ষুদ্র রিসার্চারকেও  ক্যান্সার গবেষণায় লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে হয়, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আকাশকুসুম কল্পনারই নামান্তর। সাধারণত মানুষের জিনগত (Genetic) অস্বাভাবাবিকতার (Abnormalities) কারণে ক্যান্সার হয়। সেজন্য ক্যান্সার গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে নির্দিষ্ট জিনটিকে আবিষ্কার করা, যার অস্বাভাবিকতার কারণে ক্যান্সার হয় এবং সেটিকে উদ্দেশ্য করে সম্ভাব্য  ক্যান্সার ড্রাগ ডিজাইন করা যায়। ক্যান্সার ড্রাগের টার্গেট হিসেবে আমরা একটি জিনের ফাংশন আবিষ্কার করেছি, যা সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অনুমোদনের পর ইউএস প্যাটেন্ট-এর জন্য সাবমিট করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি প্যাটেন্টকে কয়েক বছরের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ করতেই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রায় দুই লক্ষ ডলার (সিঙ্গাপুর) ব্যয় করতে হবে! আমাদের রিসার্চ বাস্তবিকই সফল ক্যান্সার ড্রাগ তৈরীতে সাহায্য করবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এরকম সারাবিশ্বে শত শত প্যাটেন্ট হচ্ছে। আমার বর্তমান ল্যাব প্রায় দশ বছর যাবত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেও ক্যান্সার চিকিৎসায় সরাসরি অবদান রাখতে পারেনি।  এভাবে পৃথিবীর শত শত ল্যাব মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে। ড্রাগ কোম্পানীগুলো অনেকটা মরিয়া হয়ে ক্যান্সারের ড্রাগ বানাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করছে। তাই একবার ড্রাগ বাজারে ছাড়তে পারলে ড্রাগ গবেষণার খরচ কড়ায়-গণ্ডায় উঠিয়ে নেয়া হয়। অন্যদিকে বিশ্বের  বিখ্যাত ড্রাগ      কোম্পানীগুলোর আচরণ কসাইয়ের মত নির্মম। ক্যান্সারের ঔষধ তৈরীতে প্রকৃতপক্ষে যা ব্যয় হয়, রোগীকে তার চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশী গুনতে হয়। বলা যায় বিখ্যাত  ড্রাগ কোম্পানীগুলোর কাছে বিশ্ববাসী জিম্মী হয়ে আছে।  ২০০৬ সালে শুধুমাত্র Roche নামক সুইস ড্রাগ কোম্পানী তিনটি ক্যান্সার ড্রাগ (MabThera, Herceptin, Avastin) বিক্রি করে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী মুনাফা অর্জন করে।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় বহন করা কি সম্ভব?   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের প্রাক্তণ ছাত্র ও কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ব্লাড ক্যান্সারে (লিউকেমিয়ায়) আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর চিকিৎসায় ব্যয় হবে কমপক্ষে এক কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকার মত। কেমোথেরাপির জন্য ব্যয় হচ্ছে অর্ধেক এবং অস্থিমজ্জা ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য খরচ হবে বাকীটা। উনার মত এক শিক্ষক যিনি বেতন পান প্রায় ২৫ হাজার টাকার মত, তাঁর পক্ষে একা এই খরচ বহন করা কি সম্ভব? এত টাকা খরচ করার পরও তিনি যে একেবারে সুস্থ হবেন তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। ক্যান্সার ড্রাগের আকাশচুম্বী দামের কথা বিবেচনা করলে আমাদের দেশে অবস্থিত (কল্পনায়) বিশ্বমানের ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় খরচ হতে পারে  কম করে হলেও ৩০/৫০ লক্ষ টাকা (অনুমান ভিত্তিক)। দেশের কতজন লোক এই টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন?  ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে অনেক পরিবারই দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে।

বাংলাদেশে বিশ্বমানের ক্যান্সার হাসপাতাল বানালেই কি চিকিৎসা খরচ সাধারণ মানুষের আয়ত্ত্বের মধ্যে আসবে? দেশে ইতিমধ্যে কয়েকটি ক্যান্সার হাসপাতাল আছে,কিন্তু সেগুলোতেই যথার্থ চিকিৎসা করানোর মত সেটআপ নেই। হুমায়ুন আহমদ স্যার চেষ্টা করলে হয়ত একটা হাসপাতাল দাঁড়া করাতে পারবেন,কিন্তু খরচ কমাবেন কীভাবে? নিশ্চয়ই ডাক্তার, নার্স ও ঔষধ কোম্পানীগুলো বিনে পয়সায় বা নামমাত্র মূল্যে সেবা প্রদান করবেন না। তাই পরবর্তীতে উনার স্বপ্নের হাসপাতালটি সম্ভবত শুধু্মাত্র উচ্চবিত্তদের গমনস্থলেই পরিনত হবে।

গরীব বা সাধারণ মানুষের জন্য  তেমন সুফল বয়ে আনবে  কি? ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী সম্পর্কে আমাদের দেশে তেমন কোন বলিষ্ঠ তথ্য-উপাত্ত নেই। দেশে সম্ভবত এমন কোন পরিবার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে যেখানে ক্যান্সারে কেউ না কেউ মৃত্যুবরণ করেনি। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে অনেক মানুষ  ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে না জেনেই মারা গিয়েছেন। আমার প্রিয় চাচাও  ক্যান্সারে মারা গেছেন, যা আমরা জানতাম না। ক্যান্সার নিয়ে কাজ করার কারণে বুঝতে পেরেছি আমার চাচার ক্যান্সার হয়েছিল!  এই চিত্র দেশে সর্বত্রই বিরাজমান। দেশের মানুষ বিষাক্ত খাদ্য ও দূষিত পরিবেশের কারণে  যে হারে  ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে তার  নজির বিশ্বের অন্য কোথাও আছে কিনা তা নিয়ে রীতিমত গবেষণা  হতে পারে। এটা ঠিক যে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে যদি বিশ্বমানের ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা যায় তা নিয়ে গর্ব করা যেতে পারে। তবে এখানে কিছু বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। ক্যান্সারের ঝুঁকি ধনী-দরিদ্র  উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান। আমার তো মনে হয় দরিদ্ররাই বেশী ঝুঁকির সম্মুখীন। সমাজে ধনের অন্যায্য বন্টনের কারণে ধনী গরীবের ব্যবধান যেমন বেড়ে  চলছে, তেমনি দরিদ্ররা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের ৯০% ভাগের বেশী মানুষ দরিদ্র। ফলে তারা ক্যান্সারের মত ব্যয়বহুল রোগ হলে চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে স্বাভাবিকভাবেই অপারগ। আবার চ্যারিটির মাধ্যমে দরিদ্র ক্যান্সার রোগীদের পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ত কাগজে-কলমেই সম্ভব, বাস্তবতা প্রশ্নবিদ্ধ। কথায় আছে, Prevention is better than cure.  তাই, দেশের সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ ক্যান্সার থেকে কীভাবে মুক্ত থাকতে পারে সে বিষয়ে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন করা সময়ের দাবী ও বেশী বিচক্ষণতাপূর্ণ। অন্যদিকে, দেশের বর্তমান ক্যান্সার হাসপাতালগুলোকে কীভাবে বিশ্বমানে উন্নীত করা যায় তা নিয়ে সত্যিকারের প্রচেষ্টাও করা  যেতে পারে। এ জাতীয় সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হুমায়ুন আহমদ স্যারের মত প্রেরণাশীল ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির বড়ই প্রয়োজন। তাছাড়া বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেশ শোচনীয়। ব্যাংগের ছাতার মত অলিতে-গলিতে ব্যবসাভিত্তিক ক্লিনিক গজিয়ে উঠছে, যেগুলো সেবার পরিবর্তে অনেক সময় নির্মমভাবে টাকার জন্য ‘শাইলক’-এর রূপ ধারণ করে। দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কল্যানট্রাষ্ট বা এধরণের সাংগঠনিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান গঠন করে সামাজিক আন্দোলনকে বেগবান করা যেতে পারে। এ ধরণের সার্বজনীন উদ্যোগে শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমদ স্যারের সম্পৃক্ততা নিঃসন্দেহে দেশের আপামর জনসাধারণকে আন্তরিকভাবে ফান্ড গঠনে উদ্ধুদ্ধ করবে, যা কিনা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ও এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা  রাখবে।

আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই দানশীল ও যথেষ্ট আবেগপ্রবণ। প্রসংগত, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের চিকিৎসার জন্য বন্ধু, সহকর্মী ও শিক্ষকরা মাত্র চার সপ্তাহের মধ্যেই ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা জোগাড় করেছেন।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক সমব্যথী একাই  ২৬ লক্ষ টাকা ডোনেট করেছেন!  হুমায়ুন আহমদ স্যারের ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা বিষয়ক লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর পরই কল্পিত ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য অনলাইনে প্রচারণা শুরু হয়ে গিয়েছে। এ থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে আমাদের তরুণ সমাজ দেশের অবস্থা পরিবর্তন করতে মুখিয়ে আছে। দলমত নির্বিশেষে হুমায়ুন আহমদের গ্রহনযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত। সত্যি কথা  বলতে কি, উনার প্রভাব দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির চাইতে বেশী। মানুষের সাথে তাঁর সম্পর্ক হৃদয়ের। উনার আহবানে কেউ সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে না। তাই হুমায়ুন আহমদ স্যারের মত নন্দিত, বন্দিত ব্যক্তিত্ব  সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে  অসাধ্য কাজও সহজেই সাধন করতে পারেন, বদলে দিতে পারেন পুরো দেশ।

মুল লেখাটি পাবেন এই ঠিকানায় ..

কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো

একটি স্তনে ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর তা অপরটিতে ছডিয়ে পড়তে পারে—এই ভয়ে অনেকেই তাদের সুস্থ স্তনটিকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এমনকি ক্যান্সার একেবারে প্রাথমিক স্তরে শনাক্ত হলেও জীবনের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তারা। কথায় বলে, ক্যান্সার—নো আন্সার!

আর এখন দেখা যাচ্ছে, সেই উত্তরের সঠিক খোঁজ না পেয়ে নিজেদের ইচ্ছাতেই সুস্থ স্তনটিকেও অস্ত্রোপচার করে বাদ দিচ্ছেন অনেক নারীই। সাম্প্রতিক একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে, দুটি স্তন বাদ দেয়ার ঘটনা বেড়ে গেছে আশ্চর্যজনকভাবে। অথচ মেডিকেল সায়েন্সে একটি স্তনে ক্যান্সার হলে শুধু সে স্তনটি অপারেশন করাই যথেষ্ট। ক্যান্সার যদি অপর স্তনটিতে ছড়িয়ে না যায়, তবে অন্যটিকে বাদ দেয়ার কোনো প্রয়োজনই সাধারণত পড়ে না। কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত স্তনটিকে সারিয়ে তোলা আদৌ যাবে কি-না অথবা অপর স্তনটিতে যে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়বে না—ডাক্তাররা এ গ্যারান্টি দিতে না পারায় আজকাল আগেভাগে দুটি স্তনেই অস্ত্রোপচার করাচ্ছেন নারীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে পরিচালিত ওই সমীক্ষায় অবশ্য এ কথাও বলা হয়েছে যে, প্রোফিল্যাকটিক ম্যাসটেকটমি অর্থাত্ সুস্থ স্তনকে অপারেশন করে বাদ দেয়ার যে পদ্ধতি তাতে স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। একটু ভেবে দেখলে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যদিকে সুস্থ স্তনটিতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি না থাকলে এ ধরনের অপারেশনের কোনো প্রয়োজন যে নেই তা বলাই বাহুল্য। অথচ প্রোফিল্যাকটিক ম্যাসটেকটমি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের অভাবে অনেক নারীই আজকাল দুটি স্তনই কেটে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

বাফেলো রাজ্যের রসওয়েল পার্ক ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. স্টেফেন এজ ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে নিউইয়র্কের সব তথ্য ঘেঁটে দেখেন এ সময় প্রায় ৬ হাজার ২৭৫ জন মেয়ে তাদের ক্যান্সার নেই এমন স্তনটির অপারেশন করিয়েছেন। অবাক করার বিষয়, তাদের মধ্যে শুধু ৮১ শতাংশের অপর স্তনটিতে ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়েছিল। বাকি ১৯ শতাংশ নারীর কিন্তু কোনো স্তনেই কোনো ধরনের ক্যান্সার ছিল না। এমনকি তাদের পরিবারের মধ্যেও ক্যান্সারের কোনো রকম ইতিহাস ধরা পড়েনি। ড. এজ জানান, পরিবারে স্তন ক্যান্সার বা ক্যান্সারের সমস্যা না থাকলে শুধু ঝুঁকি এড়াতে প্রোফিল্যাকটিক ম্যাসটেকটমির মতো অপারেশনের মধ্য যাওয়া উচিত নয়। তাছাড়া কোনো নারীর যদি একটি স্তনে ক্যান্সার শনাক্ত হয়, তবে এই অপারেশনে যাওয়ার আগে তাকে একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এর কুফল এবং অপারেশন না করালে সম্ভাব্য ঝুঁকির ব্যাপারে বিস্তারিত পরামর্শ নেয়া উচিত।

কী করে বুঝবেন স্তন ক্যান্সার
স্তন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও জানা যায়নি। তাই একাধিক কারণকে স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয় :
জেনিটিক ফ্যাক্টর : যেমন—মা-খালার থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
– অবিবাহিত বা সন্তানহীনা মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।
– একইভাবে যারা সন্তানকে কখনও স্তন্য পান করাননি, তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়।
– ৩০ বছর পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন, তাদের স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা একজন কম বয়সী মা হওয়া মহিলার থেকে অনেক বেশি।
– বয়স যত বাড়ে, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও তত বৃদ্ধি পায়।
– অল্প সময়ে বাচ্চা নিলে, দেরিতে মাসিক শুরু হলে, তাড়াতাড়ি মাসিক বন্ধ হলে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়ে যায়।
– একাধারে অনেক দিন জন্মনিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

উপরোক্ত কারণগুলো ব্রেস্ট ক্যান্সারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এগুলোই একমাত্র কারণ নয়।
কী করে স্তন ক্যান্সার বুঝবেন
– সাধারণত ৩০ বছরের আগে এই রোগ কম হয়।
– বেশিরভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।
– বুকে চাকা, সেই সঙ্গে কিছু কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে।
– কখনও কখনও বুকে চাকা এবং বগলেও চাকা নিয়ে রোগী আসতে পারে।
– নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়াও এ রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
– কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মতো ঘা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।
– অনেক সময় যে বুকে ব্যথা, সেদিকের হাত ফোলা নিয়েও আসতে পারে।
– এগুলো ছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার দূরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপসর্গ নিয়ে আসে; যেমন— হাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জণ্ডিস ইত্যাদি।